### মাতৃত্বকালীন হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির রোগ
গর্ভকালীন সময়ে দুশ্চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক চাপ হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে প্রদাহের কারণ হয়। এই অবস্থায় তিনটি প্রধান রক্তনালি আক্রান্ত হতে পারে।হৃদরোগের অর্থ হলো হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে বা অন্তঃপ্রাচীরের পর্দার ভিতরে চর্বি জমা হওয়া (cholesterol deposition under intima) বা রক্তনালির মাংস কোষের পরিমাণ বৃদ্ধি (smooth muscle cell proliferation), যার ফলে রক্তনালির lumen সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে (myocardium) অক্সিজেন ও রক্তের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, যা হৃদযন্ত্রের প্রদাহ তৈরি করে। সাধারণত জন্মগত বা প্রকৃতিগতভাবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকিতে থাকেন, বিশেষ করে ঋতুস্রাব বন্ধ (menopause) হওয়ার আগে পর্যন্ত। ৪০-৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।
তবে মাতৃত্বকালীন সময়ে কিছু বিশেষ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে, যেমন:
– স্বতঃস্ফূর্ত করোনারি আর্টারি ডিসেকশন (spontaneous coronary artery dissection)
– টাকোতসুবো ডিজিজ (takotsubo disease)
– মাতৃত্বকালীন বা প্রসব পরবর্তী কার্ডিওমায়োপ্যাথি (peripartum or postpartum cardiomyopathy)
এই তিনটি রোগ collectively **Broken Heart Syndrome** হিসেবে পরিচিত।
স্বতঃস্ফূর্ত করোনারি আর্টারি ডিসেকশন হলে গর্ভবতী মা বুকের প্রদাহ এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এবং উপসর্গগুলো হার্ট অ্যাটাকের মতো। এটি পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ১%-৪% এবং ৫০ বছরের নিচে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৫% হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে; গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা ৪৩% পর্যন্ত দেখা যায়।
গর্ভকালীন দুশ্চিন্তা এবং শারীরিক ও মানসিক চাপের ফলে রক্তনালিতে ডিসেকশন ঘটে, যা হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে প্রদাহ তৈরি করে। বিশেষ করে, বাঁ দিকের মূল রক্তনালিতে (LAD) ৩২-৪৬% আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রোগীর জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা:
– করোনারি এনজিওগ্রামের সুবিধা আছে এমন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করা যেতে পারে, যেখানে আক্রান্ত রক্তনালিতে স্টেন্ট বা রিং বসানো সম্ভব।
– যেখানে চিকিৎসা সুবিধা নেই, সেখানে প্রতিরোধমূলক (prophylactic) চিকিৎসা দেওয়া উত্তম, যাতে মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো যায়।
গর্ভাবস্থায় হার্টের মাংসপেশির ফুলে যাওয়া (cardiomyopathy) সাধারণত সন্তান প্রসবের এক মাস আগে বা পরে ঘটে। এর ফলে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, যা হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। এতে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সরবরাহ কমে যায়, ফলে শ্বাসকষ্ট, পায়ে পানি জমা এবং অবসাদ অনুভবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রথমদিকে রোগ নির্ণয়ের পর ৫০-৬০% রোগী সঠিক চিকিৎসায় তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সহজপাচ্য খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, এবং নিয়মিত চেকআপ রোগীর সুস্থতায় সহায়তা করে। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার সময় Takotsubo হৃদরোগ দেখা দিতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিতে ক্ষতি সৃষ্টি করে।
লেখক: ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, এভারকেয়ার হসপিটালস, ঢাকা