বয়স্কদের হাড় ভাঙার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অস্টিওপোরোসিস। এই রোগে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, ফলে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২০ অক্টোবর পালিত হয় ‘বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস’। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘সেই নো টু ফ্রাজাইল বোন’।
### অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ
অস্টিওপোরোসিস সহজে বাইরে থেকে বোঝা যায় না, বিশেষত হাড় ভাঙার আগে পর্যন্ত। তবে মেরুদণ্ডের হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে উচ্চতা কমে যেতে পারে।
### কারণ
অস্টিওপোরোসিসের প্রধান কারণ হলো বয়স বৃদ্ধি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। তবে শৈশব ও কৈশোরেই হাড়ের ঘনত্বের ভিত্তি তৈরি হয়, তাই অল্প বয়সে মজবুত হাড় থাকলে বয়স বৃদ্ধির সময় ঝুঁকি কম থাকে। নারীদের মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, ফলে দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও স্কেস হরমোনের মাত্রা কমলে একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অস্টিওপোরোসিসের আরেকটি কারণ হলো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। এ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, কিছু দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদিও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও অ্যালকোহল হাড়ের জন্য ক্ষতিকর।
### প্রতিরোধ
শৈশব থেকে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে বাড়ন্ত বয়স, গর্ভাবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং এবং মেনোপজের সময় যথেষ্ট ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন দুধ, দই, পনির ইত্যাদি খাওয়া উচিত। ভিটামিন ডি এর জন্য সূর্যের আলো খুবই প্রয়োজনীয়।
নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রম হাড়কে মজবুত করে। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা উচিত।
### ঝুঁকি নিরূপণ
অস্টিওপোরোসিস বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না, তবে ঝুঁকি নিরূপণ করা সম্ভব। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির বোন মিনারেল ডেনসিটি পরীক্ষা বা ডেক্সা স্ক্যান করানো যেতে পারে। রিস্ক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেও ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড় ভেঙে শয্যাশায়ী হন এবং হাড় ভাঙার পর মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়। গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের প্রকোপও বাড়ছে। তাই বয়স্কদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
—অধ্যাপক রওশন আরা, মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ