সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানো যেতে পারে।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ আহ্বান জানান। আজ শুক্রবার বিকেলে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন তিনি। এ সময় স্ত্রী জোবায়দা রহমান তাঁর পাশে ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন।’ তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে মাফিয়াচক্রের বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়তো একটু কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানো যেতে পারে।
সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আদর্শ লালনকারী কিংবা মাফিয়া সরকারের সুবিধাভোগীদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে রেখে কোনো উদ্যোগেরই সুফল মিলবে না। যেকোনো উপায়ে ঘরে-বাইরে জনগণের দুর্ভোগ যদি কমাতে যদি না পারে সরকার, তাহলে পলাতক স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করবে। গণহত্যা চালিয়ে মাফিয়াপ্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর জনগণ বাক্ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। জনগণ এখন দুঃশাসনের অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়, বৈষম্য থেকে মুক্তি চায়।’
পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, মাফিয়াপ্রধানের সুবিধাভোগীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে চাইছে।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত পথে ফেরাতে আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় নির্ধারণ ও অগ্রাধিকার ঠিক করার জন্য আড়াই মাস সময় কমও নয়। গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে সরকারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয় উদ্রেক করে। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও দায়িত্বশীল আরও গণমুখী ভূমিকায় দেখতে চায়।
সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, সংস্কার অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া এবং কখনো কখনো এটি সময়সাপেক্ষ। যেকোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব সৃষ্টি না হলে সেই সংস্কার শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল দেয় না।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। রজতজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম শাহীদুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম রাশেদ আহমেদ প্রমুখ। সভায় গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১০ জন শহীদের পরিবার এবং ১০ জন আহতকে সম্মাননা জানানো হয়। সভায় শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।