কানাডায় এসেছি পাঁচ মাস হলো। আমরা সাস্কাচুয়ান প্রভিন্সের সাস্কাটুন নামে ছোট্ট একটি শহরে থাকি। এখানে এসে জানতে পারলাম, সাস্কাচুয়ানকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব লিভিং স্কাই’। তখন বুঝতে পারিনি এর অর্থ কী। এক সপ্তাহের মধ্যেই এক সকালে জানলাম, আগের রাতে আকাশজুড়ে অরোরার আলোর নাচ ছিল। কী আফসোস, আর কতটা বিস্ময়!
এতদিন ভেবেছিলাম শুধুই নরওয়েতে অরোরা দেখা যায়, কিন্তু বুঝতে বাকি রইল না যে এটি ভুল ধারণা। এরপর থেকে শুধু অপেক্ষা করতে থাকলাম—আবার কখন অরোরা আসবে। বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি আকাশজুড়ে আলোর নাচ। অরোরা বা মেরুজ্যোতি হলো আকাশে এক ধরনের প্রাকৃতিক আলোর ঢেউ, যা মূলত মেরু অঞ্চল থেকে দেখা যায়। যদিও এটি উত্তর ও দক্ষিণ দুই মেরুতেই দেখা যায়, নর্দান লাইট নামেই এটি বেশি পরিচিত।
অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল জীবনের কোনো এক সময় নরওয়ে গিয়ে নর্দান লাইট দেখতে। এক বন্ধু একবার নরওয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, জানতে চাইলাম কেন, তখন সে বলল অরোরা দেখতে হলে নরওয়ে যেতে হবে। সেই থেকেই মনে হয়েছিল, অরোরা একমাত্র নরওয়ে থেকেই দেখা যায়। তবে অবশেষে যেই বিস্ময় দেখতে নরওয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, সেটা যে বাসার জানালা খুলেই দেখতে পাব, তা কখনো ভাবিনি। এমনকি কানাডায় আসার আগে তো এ ধরনের অভিজ্ঞতা হবে, সেটাও ভাবিনি। আমার ধারণা ছিল সাস্কাচুয়ান মানেই বরফে ঢাকা এক প্রদেশ, যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। কিন্তু এখানে গ্রীষ্মকালও আছে, যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আর বসন্ত এবং শরতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। প্রকৃতির রং, গাছের পাতা, আকাশের পরিবর্তনগুলো আমাদের কত কম জানা আছে, সেটা অনুভব করলাম।
এই পাঁচ মাসে কয়েকবার অরোরা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যেটা একসময় স্বপ্নের মতো মনে হতো, এখন সেটাই বাস্তব। এ বছরে কানাডার আকাশে সবচেয়ে বেশি অরোরা দেখা গেছে। সবুজ, বেগুনি, লালসহ নানা রং আকাশজুড়ে নেচে বেড়াচ্ছে। এক জায়গায় স্থির না থেকে অদ্ভুত সুন্দরভাবে নড়ছে।
কানাডায় আসার আগে শুনেছিলাম যে শুধু বরফের মধ্যে থাকব। তাই শীতের পোশাকও নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি রোদ ও গরম! বরফ না পেলেও, অরোরার সৌন্দর্যে ডুবে আছি। প্রতিদিন যেন মিস অরোরা এসে আমার সঙ্গে কথা বলে।
বরফ না পেলেও অরোরাকে আকাশে আমাদের বাসার ওপরেই দেখতে পেয়েছি, যা ভাবতেই পারিনি। একদিন বিশাল চাঁদও উঠেছিল, যদিও সেটাকে ফোনে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে অরোরার সেই রঙিন আলোকে পরিবারসহ মুঠোফোনে বন্দি করতে পেরেছিলাম।