বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সামনে একদল কিশোর হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা অশ্লীল গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা থানার সামনে থাকা পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে। থানার অভ্যর্থনা কক্ষে ঢুকে ফুলের টব ও অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করতে চায়। কিশোরদের এমন আচরণে হতভম্ব হয়ে যান থানার পুলিশ সদস্য ও আশপাশের লোকজন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তেজিত কিশোররা নিজেদের বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেয়। কিছুদিন আগে নগরের একটি বিদ্যালয়ের আরেক দল কিশোরের সঙ্গে তাদের বিরোধ ও মারামারি হয়েছিল। ওই বিরোধের সময় তাদের বন্ধুদের রক্ষায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিল তারা। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় পুলিশ সেখানে যেতে পারেনি। এমন ক্ষোভ থেকেই তারা এই হামলা করেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা সেখানে কোনো ভাঙচুর করেনি। ক্ষোভের কথা জানাতে তারা থানায় গিয়েছিল।
কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সানোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল কিশোর উত্তেজিত হয়ে কোতোয়ালি থানায় প্রবেশ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় পুলিশ সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এ সময় কর্মকর্তারা থানার ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন এবং উত্তেজিত কিশোরদের কাছে ঘটনা জানতে চান এবং শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা শান্ত না হয়ে থানার মধ্যে একটি পিকআপের গ্লাস ও পুলিশের সরকারি মোটরসাইকেলের গ্লাস ভাঙচুর করেছে। পরে তারা থানার অভ্যর্থনা কক্ষের সোফা ও টেবিল ভাঙার চেষ্টা করে। এ সময় তারা চিৎকার–চেঁচামেচি করতে থাকে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের খবর দেওয়া হলে সেনাসদস্যরা থানায় আসেন। পরে তাঁদের সহায়তায় থানার ওসি কিশোরদের শান্ত করেন।
এ ঘটনার অন্তত চারজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কিশোরদের ডাক-চিৎকার ও গালাগালের শব্দ শুনে তাঁরা থানার ভেতরে আসেন। এসে দেখেন, যে ছেলেরা থানায় এসেছিল তাদের আচরণ ছিল খুবই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উচ্ছৃঙ্খল। তারা অশ্লীল ভাষায় পুলিশকে গালাগাল করছিল।
কিশোরদের সঙ্গে থাকা বরিশাল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়া এক কিশোর জানায়, সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিছুদিন আগে নগরের ফকিরবাড়ি সড়কের রাখাল বাবুন পুকুরপার এলাকার কয়েক কিশোরের সঙ্গে তাদের বিরোধ হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই ছেলেরা তাদের একজনকে পেয়ে চড় দিয়েছিল। বিষয়টি সমাধান করতে তারা রাখাল বাবুর পুকুরপার এলাকায় গেলে ওই কিশোরেরা তাদের দুই বন্ধুকে কুপিয়ে আহত করে। এ সময় তারা ফোন করে পুলিশের কাছে সহায়তা চায়। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হতে বলে। তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় এসেছে। তবে তারা কোনো ভাঙচুর করেনি।
ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু ছাত্র হঠাৎ থানায় এসেছিল। তাদের কথা আমরা বুঝতে পারিনি। তাই তারা উত্তেজিত হয়ে থানার কয়েকটি ফুলের টব ও থানার সামনে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁরা জেনেছেন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নগরের সরকারি শহীদ আরজু মনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।