ধরি, দুটি ব্যক্তির কথা। প্রথমজনের কাছে যথেষ্ট তথ্য ও উপাত্ত রয়েছে, কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। অপরদিকে, দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে তথ্যের অভাব থাকা সত্ত্বেও সে নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি অনেক সময় ঘটে। কেন হয়?এখানে মূল কারণ হলো আত্মবিশ্বাস। প্রথমজনের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে, দ্বিতীয়জনের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
আপনি দেখছেন, দ্বিতীয় ব্যক্তিটি ভুল করছে, কিন্তু সে নিজেকে সঠিক মনে করছে। বিষয়টি আপনার জন্য কিছুটা হতাশাজনক হতে পারে। কেন মানুষ এমন আচরণ করে? সম্প্রতি এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে প্লাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। গবেষণায় উঠে এসেছে, ভুল করে নিজেকে সঠিক ভাবার পেছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ।
গবেষণার সহলেখক অধ্যাপক অ্যাঙ্গুস ফ্লেচার জানান, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই হলো মানুষকে সবসময় সঠিক মনে করার মূল কারণ। যখন কেউ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়, তখন সে খুব কম তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, যা ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে। কিন্তু সে মনে করে, তার সিদ্ধান্ত সঠিক।
### গবেষণার প্রক্রিয়া
গবেষণাটি ১,৩০০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর পরিচালিত হয়, যাদের গড় বয়স ৪০ বছর। তাঁদের একটি কাল্পনিক গল্প দেওয়া হয়।
প্রথম ৫০০ জনকে গল্পটির পক্ষে চারটি যুক্তি দেওয়া হয়, যার মধ্যে তিনটি যুক্তি গল্পটি সত্যি হওয়ার পক্ষে এবং একটি নিরপেক্ষ যুক্তি ছিল।
পরবর্তী ৫০০ জনের ক্ষেত্রে গল্পটি মিথ্যা হওয়ার পক্ষে তিনটি যুক্তি এবং একটি নিরপেক্ষ যুক্তি দেওয়া হয়।
শেষ ৩০০ জনের কাছে সাতটি যুক্তি দেওয়া হয়—তিনটি গল্পটির পক্ষে, তিনটি বিপক্ষে এবং একটি নিরপেক্ষ।
এরপর, সকলের কাছে প্রশ্ন করা হয়, গল্পটি সত্যি নাকি মিথ্যা।
প্রথম ৫০০ জনের বেশিরভাগই বলেছেন গল্পটি সত্য, দ্বিতীয় ৫০০ জন বলেছেন মিথ্যা। এবং প্রায় সবাই নিজেদের উত্তরের সঠিকতা নিয়ে অধিক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তবে, যাদের কাছে সাতটি যুক্তি ছিল, তারা সঠিক উত্তর দিতে বেশি সক্ষম হলেও নিজেদের উত্তর সম্পর্কে কম আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
### ফলাফল
গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে, অল্প তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বেশি আত্মবিশ্বাসী হন, অথচ সেই সিদ্ধান্তের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের সঠিক মনে করেন।
তবে এটি সার্বিকভাবে বলা যাবে না। কিছু মানুষ কম তথ্য বিশ্লেষণ করেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, আবার কেউ অনেক তথ্য পর্যালোচনা করেও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।