কর্মব্যস্ত নগরজীবনে আমরা বেশিরভাগ সময় কাটাই ঘরের ভেতরের কৃত্রিম আলোয়। সারাক্ষণ চোখ থাকে কম্পিউটার, ট্যাব, বা মুঠোফোনের স্ক্রিনে, যা আমাদের মনকে প্রায়ই ক্লান্ত করে তোলে। এই কৃত্রিমতায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে মন খোঁজে এক খণ্ড সবুজ—হোক তা অবারিত মাঠ, দূরের কোনো বনজঙ্গল, কিংবা ব্যালকনির ছোট্ট বাগান। সবুজ প্রকৃতি আমাদের মনকে প্রশান্তি এনে দেয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
### কীভাবে সবুজ প্রকৃতি আমাদের ভালো রাখে?
**১. প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটা কম ক্লান্তিকর:** যারা পাহাড়ে ওঠেন, তারা বলেন এক ঘণ্টা ট্রেডমিলে হাঁটার চেয়ে এক ঘণ্টা পাহাড়ে হাঁটা কম ক্লান্তিকর। কারণ, সবুজ প্রকৃতি এবং নির্মল বাতাস দেহে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ কমিয়ে উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করে।
**২. মানসিক চাপ কমায়:** সবুজ প্রকৃতি রাগ, হতাশা ও মানসিক অবসাদ কমিয়ে দেয়, ফলে পজিটিভ চিন্তা বাড়ে এবং মুড ডিজঅর্ডার কম হয়।
**৩. চোখের আরাম:** কৃত্রিম আলোয় চোখের মাংসপেশিতে টান পড়ে। সবুজের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের মাসলগুলো রিল্যাক্সড হয় এবং মায়োপিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।
**৪. মনোযোগ ও সৃজনশীলতা বাড়ায়:** সবুজ প্রকৃতি মনোযোগ, সৃজনশীলতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যাঁরা প্রকৃতির মধ্যে বেশি সময় কাটান, তাঁদের ডিমেনশিয়া, সিজোফ্রেনিয়া, এবং মুড ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যাগুলো কম হয়।
**৫. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি:** বদ্ধ ঘরের বাতাস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের অসুখ বাড়ায়। সবুজ গাছপালা প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে, অনিদ্রা দূর করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
**৬. সামাজিক সংযোগ ও স্বাস্থ্য:** সবুজ পরিবেশে একসঙ্গে হাঁটা বা গল্প করা যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে, তেমনি হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং স্থূলতা কমিয়ে আনে।
### কীভাবে সবুজের সংস্পর্শে থাকবেন?
**১. ছুটির দিনে প্রকৃতির কাছে:** সপ্তাহের ছুটির দিনে কাছের কোনো নদীর তীর, বড় সবুজ মাঠ, বা পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে।
**২. ঘরে বাগান করা:** বাসার পাশে, ছাদে, বা বারান্দায় ছোট্ট বাগান করতে পারেন। ঘরের কোণে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে ঘরটাই সবুজ হয়ে উঠবে।
**৩. কর্মস্থলে সবুজ যোগ করা:** নিজের বসার জায়গায় ছোট সবুজ গাছ রাখা যেতে পারে, আর জানালার পাশে ডেস্ক সাজালে কিছু সময় বাইরের সবুজ দেখে চোখ আরাম পাবে।
**৪. আউটিংয়ের পরিকল্পনা:** বন্ধুদের সঙ্গে আউটিং করলে সেটা সবুজ পরিবেশে বা খোলা জায়গায় করার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে সতেজ হতে সাহায্য করবে।
*(ডা. আফলাতুন আক্তার জাহান, স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা)*