দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ১৬:৪৭

ঋণখেলাপি হয়েও পদে বহাল এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ চার পরিচালক

ঋণ খেলাপি

এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার আট ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না। খেলাপি হয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছে। একই অবস্থা তাঁর বাবা ও এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক আবদুল আউয়ালেরও। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁদের প্রাইম গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা।

এর বাইরে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলা হোসাইন ও পরিচালক এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেমও ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন। ৪ পরিচালকের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ায় এনসিসি ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে বিএসইসি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

ঋণখেলাপি হলেও এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন তাঁরা। আবার পুনর্নিয়োগ পাওয়ারও চেষ্টা করছেন নানাভাবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপি কেউ ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না। আবার পরিচালক পদে থাকা কেউ ঋণখেলাপি হলে তাঁকে অপসারণ করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনসিসি ব্যাংকের চার পরিচালকের বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর এনসিসি ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার জন্য অনুমতি চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করে। ৯ অক্টোবর বিএসইসি এক চিঠিতে এনসিসি ব্যাংকের এমডিকে জানায়, ব্যাংকটির চার পরিচালকের ঋণ (আবুল বাশার, আবদুল আউয়াল, এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেম ও সোহেলা হোসাইন) খেলাপি থাকায় এই বন্ড অনুমোদন দেওয়া গেল না।

জানা যায়, আবুল বাশার তিন বছর ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও প্রাইম গ্রুপের ডিএমডি। তাঁর পিতা আবদুল আউয়াল গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আট ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ঋণ ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৭ ধারায় নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ধারায় নোটিশ দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পরিচালক পদ শূন্য হয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ধলেশ্বরী ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করে প্রাইম গ্রুপ। পরে অন্য পরিচালকদের বাধায় তা আটকে যায়। আবার অনিয়মের আশঙ্কায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার (সিবিএস) কেনাও আটকে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলা হোসাইন মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি মীর সিমেন্ট, মীর রিয়েল এস্টেট ও মীর কংক্রিট প্রোডাক্টস লিমিটেডের প্রধান। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণও খেলাপি হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির অপর পরিচালক এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেম আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী। এই প্রতিষ্ঠানের ঋণও খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এনসিসি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যানের ঋণ পুনঃ তফসিল করে ইতিমধ্যে নিয়মিত হয়ে গেছে। অন্যদের ঋণও নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে।’

জানা যায়, গত ১ আগস্ট কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক পদত্যাগ করেন। তাঁরা আবার পুনর্নির্বাচিত হন। সভায় মো. আবদুল আউয়াল, মো. নূরুন নেওয়াজ, সৈয়দ আসিফ নিজামুদ্দীন ও মো. মইনুদ্দীন পদত্যাগ করেন। বিদ্যমান নিয়মে এজিএম হওয়ার সাত কর্মদিবস তথা ১১ আগস্টের মধ্যে অনাপত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করার কথা। সব তথ্য যাচাই করে সেখান থেকে অনাপত্তি আসার পর পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। এজিএমের পর পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় পরিচালকদের ভোটের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে এজিএম হওয়ার ১ মাস ২৫ দিন পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দিয়েছে এনসিসি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে আড়াই মাস ধরে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আটকে আছে অনেক সিদ্ধান্ত।

ঋণখেলাপির বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আবুল বাশার ও পরিচালক মঈনউদ্দীন মোনেমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট