টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশে সংক্রমণজনিত জ্বরের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটে: সালমোনেলা টাইফি ও সালমোনেলা প্যারাটাইফি। সালমোনেলা টাইফি সংক্রমণে টাইফয়েড বা এন্টারিক ফিভার এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি সংক্রমণে প্যারাটাইফয়েড হয়।
### সংক্রমণ
টাইফয়েডের জীবাণু প্রধানত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এই দুই ধরনের জীবাণুর লক্ষণ প্রায় একরকম। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও অন্ত্রনালিতে এই ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে এবং ধীরে ধীরে রক্তস্রোতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম সপ্তাহে জ্বর দেখা দেয়, যা ক্রমাগত বেড়ে যায়। এছাড়া পেটব্যথা, মাথাব্যথা, কিছু রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যদের ডায়রিয়া হতে পারে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে, কিছু রোগীর বুক ও পিঠে ছোট গোলাপি দানা দেখা দিতে পারে, যা চার-পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। এই সময়ে প্লীহা বড় হয়ে যায় এবং অন্ত্রের দেয়ালে ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি হতে পারে। অ্যালসার থেকে রক্তক্ষরণ ও অন্ত্রনালির ফুটো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্রমাগত উচ্চ জ্বরের কারণে মানসিক বিভ্রান্তি ও প্রলাপ দেখা দিতে পারে। যদি চিকিত্সা না করা হয়, তৃতীয় সপ্তাহের পর রোগী নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে।
### জটিলতা
– পেট ফুটো হওয়া
– অন্ত্রে রক্তক্ষরণ
– হাড় ও গিরায় ইনফেকশন, অস্টিওমাইলাইটিস
– পিত্তথলির প্রদাহ
– হার্ট ফেইলিউর
– নিউমোনিয়া
– এনসেফালাইটিস
– মেনিনজাইটিস
– হার্ট ও কিডনির প্রদাহ
যদি চিকিত্সা করা না হয়, টাইফয়েড জ্বরে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
### শনাক্তকরণ
রক্ত কালচার করে জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর আগে রক্ত কালচার জরুরি। টাইফয়েড নির্ণয়ের আগে যদি কেউ অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে, তাঁদের জন্য মলমূত্র কালচার দ্বিতীয় এবং হাড়ের মজ্জা কালচার তৃতীয় সপ্তাহের পর করা প্রয়োজন।
### চিকিৎসা
টাইফয়েডের সঠিক চিকিৎসা হলো যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। এটি মুখে খাওয়া বা ইনজেকশন হিসাবে দেওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পরও জ্বর কমতে পাঁচ-ছয় দিন লাগতে পারে। পাশাপাশি জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল এবং শরীর ভেজা গামছা দিয়ে মুছে দিতে হবে। প্রচুর তরল খাবার ও উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার দিতে হবে। চিকিত্সকের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে।
### প্রতিরোধ
– বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
– ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
– পায়খানা-প্রস্রাবের পর ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
– থালাবাসন ও ফলমূল-শাকসবজি পরিষ্কার পানিতে ধোবেন।
– খাওয়ার আগে খাবার ভালোভাবে গরম করে খান।
– রাস্তার পাশের দোকানের খাবার এড়িয়ে চলুন।
– এলাকায় পয়োনিষ্কাশন ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় ত্রুটি না হয় সে বিষয়ে নজর রাখুন।
– প্রয়োজনে টাইফয়েডের ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।
— ডা. এ কে এম মূসা, সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন, বারডেম হাসপাতাল