ব্যস্ত নগর জীবনে সবাই যেন দৌড়াচ্ছে। প্রতিদিন পছন্দের খাবার বাসায় তৈরি করা এখন বেশ ঝামেলার কাজ। হঠাৎ অতিথি এলে দ্রুত আপ্যায়নের জন্য ভরসা হয়ে উঠছে হিমায়িত বা ফ্রোজেন খাবার, যা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এগুলো দেশেই তৈরি হচ্ছে।দেশীয় ব্র্যান্ডের তৈরি মুখরোচক নানা ধরনের খাবার এখন সহজেই পাওয়া যায় বাজারে। বিশেষত, দ্রুত জলখাবার হিসেবে চিকেন উইংস, কাবাব, সসেজ, মিটবল, চিকেন ফিঙ্গার, ললিপপ, নাগেটস, বিভিন্ন মাংস, মাছ ও সবজি দিয়ে তৈরি রোল, শিঙাড়া, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, পরোটা, রুটি, পিৎজা এবং মাছের কাটলেট বা টেম্পুরা বিশেষভাবে জনপ্রিয়। ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে হালকা ভেজে নিলেই বা এয়ার ফ্রায়ারে দিলেই হিমায়িত খাবার দ্রুত খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবারের ব্যবসাকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে। কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, এজি ফুড, ঝটপট, প্যারাগন, কান্ট্রি ন্যাচারাল, মাছ সমাচার, বেঙ্গল মিটসহ বিভিন্ন দেশীয় ব্র্যান্ড এই ব্যবসায় নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে। প্যাকেজিংয়ের মানও উন্নত, যেখানে কোনোভাবেই বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকে না। এসব খাবারের দাম সাধারণত পিস বা ওজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিকেন সসেজের চাহিদা এখন বেশ বেশি, যা ২৭০ থেকে ৩৫০ গ্রাম প্যাকেটে ১৩৭ থেকে ৩১০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। একইভাবে, ২৫০ থেকে ৫০০ গ্রামের প্যাকেটে ১২ থেকে ১৫টি সমুচার দাম ২০৬ থেকে ৪৫০ টাকা।
ফ্রোজেন খাবারের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু আইটেম হলো শামি কাবাব, নাগেটস, মিটবল, চিকেন পপকর্ন এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস। এসব খাবার ব্র্যান্ডভেদে বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসের দাম ২৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজির প্যাকেটে ৮৫ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। স্প্রিং রোল, রুটি, পরোটা, ও ডালপুরি এবং আলুপুরি বিভিন্ন দামে সহজলভ্য, যা ব্যস্ত জীবনে চটজলদি খাবার তৈরির সমাধান হিসেবে জনপ্রিয়।
মাছের হিমায়িত খাবারেও বৈচিত্র্য রয়েছে। চিংড়ি রোল, চিংড়ি পাকোড়া, ফিশ কাটলেট বা ফিশ ফিঙ্গারের মতো পণ্যগুলো বেশ জনপ্রিয়। দাম আকার ও পরিমাণ অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে থাকে।
হিমায়িত খাবারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় ব্র্যান্ড ও উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের পণ্য সুপারশপ, খুচরা দোকান ও অনলাইনে সহজলভ্য। এজি অ্যাগ্রো ফুড যেমন দেশের বাজার ছাড়াও কানাডা, কোরিয়া, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরসহ ১১টি দেশে হিমায়িত খাবার রপ্তানি করছে।
হিমায়িত খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে। মাছ সমাচারের স্বত্বাধিকারী তানিয়া চৌধুরী জানান, তারা টাটকা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে কোনো ধরনের কৃত্রিম সংরক্ষণকারী বা ফ্লেভার ছাড়া খাবার তৈরি করেন। সংরক্ষণের জন্য তারা প্রাকৃতিক উপকরণ, যেমন লেবুর রস ব্যবহার করেন।
হিমায়িত খাবারের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনই নতুন নতুন দেশীয় ব্র্যান্ড ও উদ্যোক্তারাও এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে।