বিশ্বের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথার সম্মুখীন হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোমর ব্যথা পৃথিবীর শীর্ষ বিকলাঙ্গতার কারণ। কোমর ব্যথা সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে: স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি। তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে থাকা কোমর ব্যথাকে দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক কোমর ব্যথা বলা হয়। ক্রনিক কোমর ব্যথার কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৯০% ক্রনিক কোমর ব্যথার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না, যা নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন (NSCLBP) হিসেবে পরিচিত।
কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ব্যথানাশক ওষুধ, ইলেকট্রোথেরাপি এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন সবচেয়ে প্রচলিত। তবে ২০১৮ সালে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এসব প্রচলিত চিকিৎসাকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় কার্যকর নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গবেষণাপত্রে বায়ো-সাইকো-সোসিয়াল চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
**স্টপস কী**: স্পেসিফিক ট্রিটমেন্ট অব দ্য প্রবলেমস অব দ্য স্পাইন (STOPS) অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূলমন্ত্র হলো পুঙ্খানুপুঙ্খ রোগ নির্ণয়। যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে না, তাই STOPS একাধিক কারণ চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়। এই কারণগুলোর মধ্যে শারীরিক, মানসিক (যেমন: ডিপ্রেশন), এবং আর্থ-সামাজিক (যেমন: পারিবারিক অশান্তি) অন্তর্ভুক্ত। এরপর রোগীর জন্য সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং রোগী সুস্থ হওয়ার পর কী ধরনের স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন তার ভিত্তিতে ফিটনেস উন্নয়নের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। STOPS চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতিটি রোগীর জন্য ভিন্ন হতে পারে, কারণ এটি রোগীর কোমর ব্যথার কারণের ওপর নির্ভর করে।
**স্টপস কতটা কার্যকরী**: পূর্বে পরিচালিত বিশদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোর ফলাফল অনুযায়ী, STOPS সাধারণ চিকিৎসার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী ও অর্থ-সাশ্রয়ী।
বাংলাদেশে কোমর ব্যথার চিকিৎসা সাধারণত অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেক সময় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, যা চিকিৎসার খরচকে কয়েকগুণ বা শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। STOPS কোমর ও অন্যান্য মেরুদণ্ডের ব্যথা, যেমন ঘাড় ব্যথার চিকিৎসার খরচ কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে এক বা দুই দিন চিকিৎসা নিতে হয়, ফলে ঘন ঘন হাসপাতালে যাতায়াতের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে STOPS একটি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়।
**লেখক**: কোমর ব্যথা বিষয়ক গবেষক, লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।
