দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ২৩:৪৩

ক্ষুদ্রঋণ হয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন, আইন পরিবর্তন হচ্ছে

সময়ের পরিবর্তনে পাল্টে যাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণসংক্রান্ত আইন। আইনে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ শব্দটিই আর থাকছে না। বদলে হচ্ছে ‘ক্ষুদ্র অর্থায়ন’। বিদ্যমান ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ) রয়েছে, সেই নামেরও বদল হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হতে যাচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে সংক্ষিপ্ত নাম আগেরটাই থাকছে। সংস্থাটির প্রধান পদ এখন নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান, ‘ভাইস’ শব্দটি বাদ দিয়ে পদটির নাম হচ্ছে নির্বাহী চেয়ারম্যান।

এসব পরিবর্তনসহ আরও কিছু পরিবর্তন নিয়ে এমআরএ আইন–২০০৬ এবং এমআরএ বিধিমালা–২০১০ নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরি খসড়ার অনুমোদন দিয়েছিল সাবেক সরকারের মন্ত্রিসভা। আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের কাছাকাছি সময়ে এসে সরকারের পরিবর্তন হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যেসব ধারায় পরিবর্তন আনা জরুরি, লম্বা সময় ধরে যাচাই-বাছাই করে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইন সংশোধন হবে।

এমআরএর সদ্য বিদায়ী নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্রঋণ আর আগের জায়গায় নেই, অনেক বড় হয়েছে। ধারণাটি এখন ক্ষুদ্র অর্থায়নের। এ কারণেই প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আইন সংশোধনের। আইন সংশোধন হয়ে গেলে, তা খাতটির জন্য ইতিবাচক হবে।

আইনে বলা ছিল, এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান হবেন অন্যূন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কেউ। অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা ছিল না। খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক ও নির্বাহী কাজের অভিজ্ঞতাসহ নির্বাহী চেয়ারম্যানের অন্যূন ২৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে বেতনভোগী কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না। এ ধারারও সংশোধন হচ্ছে। নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা একই সময়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানে বেতনভোগী কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না।’

এমআরএর নতুন নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন গত বুধবার বিকেলে সংস্থাটিতে যোগ দিয়েছেন। এরপর পূজার ছুটি শুরু হয়ে যায়। গতকাল রোববার মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইন ও বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র গ্রাহকেরা ঋণের জন্য ব্যাংকে অতটা যেতে পারেন না। ক্ষুদ্রঋণের বদলে ক্ষুদ্র অর্থায়ন এখন বাস্তবতা। আবার সঞ্চয়কারীদের অর্থ বড় বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক খাত এখন ভুগছে। সময় এসেছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন খাতটিকে ঢেলে সাজানোর। দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাতটিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।

আইনের পাশাপাশি বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে বিধিমালায়ও। বিদ্যমান বিধিমালায় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলের জন্য সনদে উল্লিখিত শর্ত ভঙ্গের কথা বলা আছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সনদ নেওয়ার সময় উল্লেখ করা শর্তগুলোর যেকোনো একটা ভঙ্গ করলেও ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল হবে। সনদ বাতিলের পর বর্তমানে ১৫ দিন সময় পাওয়া যায় আপিলের জন্য। এ সময় বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হচ্ছে।

আগের বিধিমালায় ছিল, প্রতি মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদে এমনভাবে নতুন সদস্য নিতে হবে, যাতে পর্ষদে নতুন সদস্যসংখ্যা অর্ধেকের কম না হয়। নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো মেয়াদে মোট সদস্যসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না।

বর্তমানে কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থের ১০ শতাংশ দিয়ে একটি সংরক্ষিত তহবিল গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুন বিধিতে অর্থের পরিমাণ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গৃহনির্মাণ, যানবাহন, দুর্যোগকালীন বা গুরুতর অসুস্থ থাকার কারণে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনের বিপরীতে ও ভবিষ্য তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারেন। ধারাটির সঙ্গে নতুন করে শিক্ষাঋণ যুক্ত হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণস্থিতিকে বর্তমানে নিয়মিত, পর্যবেক্ষণযোগ্য, নিম্নমান, সন্দেহজনক ও মন্দ ঋণ ইত্যাদি শ্রেণিতে বার্ষিক ভিত্তিতে দেখানো হয়। নতুন বিধিমালার খসড়ায় এসব তথ্য জানাতে হবে ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে বা বছরে দুবার।

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের (আইএনএম) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এ বাকী খলীলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহু বছর ধরেই বলে আসছিলাম, ক্ষুদ্রঋণের বদলে ক্ষুদ্র অর্থায়নের যুগে এসেছি আমরা। আইন ও বিধিমালা পরিবর্তনের এ উদ্যোগ হচ্ছে ক্ষুদ্র অর্থায়নের চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মধ্যে আটকে না থেকে এখনই বহুমাত্রিক কাজ করছে। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’

বাকী খলীলী আরও বলেন, নতুন নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন নিয়োগ পাওয়ার আগে পর্যন্ত এমআরএ পরিচালিত হয়ে আসছিল অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের দিয়ে। এ ধরনের আমলাদের মাধ্যমে এমআরএর মতো সংস্থা কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আগের সরকারগুলো তা বুঝতে সক্ষম ছিল না।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

বিয়ের প্রস্তুতি শুরু

বলিউডের আলোচিত অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়ার সঙ্গে অভিনেতা বিজয় ভার্মার দীর্ঘদিনের