দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৬:১৪

শিক্ষাক্রমের বারবার পরিবর্তন: শিক্ষার্থীরা বারবার হোঁচট খাচ্ছে

### শিক্ষাক্রমের বারবার পরিবর্তন: শিক্ষার্থীরা বারবার হোঁচট খাচ্ছে

 

শিক্ষাক্রমের বারবার পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত হোঁচট খাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে শিক্ষাক্রমে সাতবার পরিবর্তন এসেছে, যার মধ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। গত দেড় দশকে পরিবর্তনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৭ সালে প্রথম শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পর ১৯৮৬ সালে পাঠ্যবইয়ে কিছু পরিমার্জন করা হয়। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমকে যোগ্যতাভিত্তিক করা হয় এবং ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক স্তরে উদ্দেশ্যভিত্তিক পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ২০০২ সালে প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের কিছু পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়। ২০১২ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও ২০২৩ সাল থেকে হঠাৎ করে অভিজ্ঞতানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি শুরু হয় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে, যেখানে শিক্ষাবিদদের গঠনমূলক সমালোচনা বা পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

 

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল। নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন, শেখানোর পন্থা, এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ প্রচলিত শিক্ষার পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়েছে।

 

দেড় কোটির বেশি শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার স্কুল, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে, যা অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন শিক্ষাক্রম থেকে ১ সেপ্টেম্বর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষক প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়, মূল্যায়ন নিয়ে অস্পষ্টতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবের কারণে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। শিক্ষাবিদরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একের পর এক শিক্ষাক্রম পরিবর্তন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পাল্টাচ্ছে, ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

 

এদিকে, এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে নতুনভাবে ছাপানোর কাজ চলছে। এ কার্যক্রমে ৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। ১৫ সেপ্টেম্বর, এনসিটিবি প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১০ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর গঠিত কমিটি বাতিল করা হয়েছে।

 

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই দ্রুত ছাপানোর জন্য হাতে সময় খুব কম। তাই প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বই ছাপাতে দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন, যা পরবর্তীতে করা যাবে।

 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সরকারের কত টাকা অপচয় হয়েছে, তা জানার জন্য এনসিটিবি একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। জানা গেছে, এতে জনগণের শত শত কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরকার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের অর্থ ও সেমিনার বাবদ খরচও অপচয় হয়েছে।

 

এনসিটিবির সংশ্লিষ্টরা বলেন, বহু বছর ধরে চলে আসা শিক্ষাব্যবস্থায় হঠাৎ পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে তোষামোদকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং পরামর্শ দেওয়ার পরও অনেককে বঞ্চিত ও তিরস্কার করতে হয়েছে।

 

পাঁচজন শিক্ষাবিদ বলেছেন, স্বাধীনতার ৫ দশকেরও বেশি সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় লাগে, ফলে সবাই বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিচ্ছে।

 

শিক্ষাবিদরা উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে আরও সাতটি কমিশন গঠন করা হলেও কার্যকর ফল মেলেনি। সর্বশেষ ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে সর্বশেষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, যেমন—প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট