গত বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া তানজিম মুনতাকা এ বছরের পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তার কথায়, বেসিক ধারণা ভালোভাবে তৈরি থাকলে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে তা মনে রাখা সম্ভব। একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন আসলেও তা উত্তর করা যায়। উচ্চমাধ্যমিক সময়ে বেসিক তৈরি করার জন্য তিনি জোর দেন, কারণ ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে নতুন করে বেসিক তৈরি করার সুযোগ থাকে না।
### বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে মূল বইয়ের বিকল্প নেই। পড়ার সময় কোনো অধ্যায়ে ফাঁক না রাখার পরামর্শ দেন মুনতাকা। উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য আবুল হাসান, প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমল, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ইসহাক, এবং রসায়নের জন্য হাজারী স্যারের বই পড়তে পারেন। তিনি বলেন, প্রতিটি অধ্যায়ের সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে কোনো বিষয় অবহেলা করার মতোও নয়। প্রশ্ন ব্যাংক দেখে অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে পড়াশোনা করতে হবে।
### প্রস্তুতির ধাপ:
প্রথমে মূল বই পড়া, তারপর প্রশ্ন ব্যাংক অনুশীলন, অতিরিক্ত বইয়ের তথ্য সংগ্রহ এবং সবশেষে বারবার অনুশীলন করলে প্রস্তুতিটা সঠিকভাবে এগোবে। কোনো অধ্যায় বাদ দেওয়া যাবে না এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বাইরের অধ্যায়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
### অতিরিক্ত বইয়ের প্রয়োজনীয়তা:
অতিরিক্ত বই থেকে বিশেষ করে জীববিজ্ঞান অংশের কিছু তথ্য পড়ে নিতে হবে। উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞানের কিছু অধ্যায় থেকে বিগত বছরগুলোতে প্রশ্ন এসেছে। এসব তথ্য আলাদা করে পড়া প্রয়োজন, তবে অতিরিক্ত বইয়ের সবকিছু পড়ার প্রয়োজন নেই।
### মূল বইয়ের অনুশীলনী:
মূল বইয়ের অনুশীলনীতে শতভাগ দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব অনেক। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশ্নের একটি বড় অংশ মূল বইয়ের অনুশীলনী থেকেই আসে। অধ্যায়ের শেষের সারসংক্ষেপ এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়া উচিত।
### সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির প্রস্তুতি:
মুনতাকা মনে করেন, সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরেজি অংশ পরীক্ষার ফলাফলকে অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের প্রস্তুতি সবার কাছাকাছি থাকলেও, সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরেজির ওপর জোর দিলে অনেকেই বাড়তি নম্বর তুলতে পারেন। বিগত বছরের প্রশ্ন এবং বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
### প্রতিদিনের পড়াশোনা:
কতটুকু পড়া উচিত তা নির্ভর করে পরীক্ষার্থী কতটা সময় দিতে পারে তার ওপর। দ্রুত একবার সিলেবাস শেষ করে রিভিশন শুরু করার পরামর্শ দেন মুনতাকা। যতবার রিভিশন দেওয়া হবে, বিষয়ের ওপর দক্ষতা তত বাড়বে।
### প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার গুরুত্ব:
মক টেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলো সমাধান করা উচিত। সময় ধরে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে ১০০টি প্রশ্ন ৬০ মিনিটে সম্পন্ন করার দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
### পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী দাগানোর কৌশল:
১. সহজ প্রশ্নগুলো আগে দাগাতে হবে, কঠিন এবং গণিত সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো শেষে।
২. বৃত্ত ভরাটের সময় যেন কোনো সিরিয়াল না ভেঙে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
### প্রস্তুতির সাধারণ ভুলগুলো:
১. মূল বইকে অবহেলা করা
২. পর্যাপ্ত অনুশীলন না করা
৩. সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজিকে অবহেলা করা
৪. মক টেস্ট যথেষ্ট না দেওয়া
৫. গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিয়ে সব পড়ার চেষ্টা করা
৬. বোঝার পরিবর্তে সব মুখস্থ করার চেষ্টা করা
৭. অতিরিক্ত কাজে সময় নষ্ট করা।
### মনোবল ধরে রাখা:
প্রস্তুতি চলাকালে হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ও ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মুনতাকা সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন।