আমাদের দেহে ২০৬টি হাড় রয়েছে। দুটি হাড় যেখানে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়, সেটিই অস্থিসন্ধি নামে পরিচিত। অস্থি, মাংসপেশি এবং লিগামেন্ট দিয়ে অস্থিবন্ধনী গঠিত হয়। লিগামেন্ট হলো একটি স্থিতিস্থাপক, শক্ত, সাদা বর্ণের বিশেষ ধরনের পেশি, যা হাড়কে মজবুতভাবে একত্রিত করে রাখে। এটি হাড়ের গাঁথুনিতে শক্ত রশির মতো কাজ করে এবং হাড়গুলোকে সংযুক্ত রাখে।
শরীরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অস্থিসন্ধি রয়েছে, যেমন হাঁটু, ঘাড় ও কোমরের অস্থিসন্ধি। যেকোনো নড়াচড়া, এমনকি শোয়া পর্যন্ত এসব অস্থিসন্ধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অস্থিসন্ধিগুলো সুস্থ রাখতে ছোটবেলা থেকেই সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
### করণীয়
1. **ওজন নিয়ন্ত্রণ**: অতিরিক্ত ওজন শরীরের ভার বহনকারী জয়েন্টগুলোতে চাপ সৃষ্টি করে, যা জয়েন্ট ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। এতে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
2. **নিয়মিত ব্যায়াম**: ব্যায়াম অস্থিসন্ধির চারপাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্ট শক্তিশালী করে, যা জয়েন্টকে সুরক্ষা দেয়। ব্যায়ামের ফলে ওজন কমে, ফলে অস্থিসন্ধির ওপর চাপ কমে।
3. **শক্তিশালী পেশি**: শক্তিশালী পেশি জয়েন্টকে ভালোভাবে সাপোর্ট দেয়। যেমন, ঊরুর পেশি শক্তিশালী হলে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে। পেট ও পিঠের পেশি ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। ভারোত্তোলন ও ইয়োগা পেশি ভালো রাখতে সহায়ক।
4. **সঠিক দেহভঙ্গি**: দাঁড়ানো, বসা বা শোয়ার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা জরুরি, যা পেশি ও লিগামেন্টের ওপর চাপ কমায়। দীর্ঘ সময় পায়ের ওপর পা তুলে বসা বা উঁচু হিলযুক্ত জুতা পরা ঠিক নয়।
5. **সুষম খাদ্যাভ্যাস**: হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ হাড়ের ক্ষতি করতে পারে, তাই ধীরে ধীরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
6. **ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি**: নিয়মিত ক্যালসিয়াম, আয়রন ও আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা হাড়ের জন্য খুবই জরুরি। দুধ, দই, পনির ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, আর যাঁরা দুধজাতীয় খাবার খান না, তাঁরা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ সবজি ও বীজ খেতে পারেন।
7. **মাছ ও মাছের তেল**: মাছ ও মাছের তেলে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে সহায়ক।
8. **গ্লুকোসামাইন ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট**: অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে অনেক সময় গ্লুকোসামাইন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। হলুদও প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা দূর করতে কার্যকর।
9. **বাদাম**: বাদামে ম্যাগনেশিয়াম, আই-অ্যারজিনিন ও ভিটামিন ই থাকে, যা দেহের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম ও অন্যান্য বাদাম খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
অস্থিসন্ধিগুলো সুস্থ রাখতে এসব নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যত্নের প্রয়োজন আরও বেড়ে যায়।
**অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম**, বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মগবাজার, ঢাকা