### গাও হে শুভ গান, সাজাও ধরণী আকাশ নীল
“গাও হে শুভ গান, সাজাও ধরণী আকাশ নীল”—এমন এক অনুভূতি যে কোনও প্রেমিকের হৃদয়ে জাগ্রত হয়। কিন্তু এখানেই থেমে যাবে ভালোবাসার যাত্রা, কপালে কাজলের টিপ এঁকে দেওয়া যেন নজর না লাগে। এই সৌন্দর্য আমাকে পাগল করে তোলে। বলিউডের এই জনপ্রিয় গানের মতোই আমাদের ছ’মাইয়া বিল। বিধাতা এই বিলকে দু হাত ভরে স্বর্গের ছায়া দিয়ে সাজিয়েছেন। বিষাদের আলিঙ্গনে থাকা মন যেন লাল শাপলার আভায় সব কিছু ভুলে যায়।
ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় বর্ণীল গঙ্গা ফড়িংয়ের দল, কখনো খোল বেয়ে পাড়ে আসে শামুক। গুচ্ছভর্তি ফুল হাতে সদ্য প্রেমিক ছুটে চলে, প্রেয়সীর হাসিমুখে। এই সৌন্দর্যের পসরা সাজানো বিলের কথা অনেকেরই অজানা। রাজধানী থেকে মাত্র ২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যেতে পারবেন।
বিলের নামকরণ নিয়ে দুইটি প্রচলিত কথা আছে। প্রথমত, বিলটিতে বছরে ছয় মাস পানি থাকে, যার কারণে এর নাম ছ’মাইয়া। দ্বিতীয়ত, যখন পানি শুকিয়ে যায় এবং ফসল চাষ হয়, তখন দেখলে মনে হয় এ বিল পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে অন্তত ছয় মাস লাগবে। স্থানীয়রা ছয় মাসকে ছ’মাইয়া বলে ডাকে।
প্রতিবছর শরৎ ও শীতের সময় এই বিল শতদলে রঙিন শাপলার সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে থাকে। বিলের চারপাশে রঙের মেলা। নীল আকাশের নিচে সবুজ পাতার ওপর রঙিন শাপলার মধ্যে মন হারিয়ে যায়। লোভী মনের সৌন্দর্য পিপাসা এত গভীর যে, মনে হয় আরেকটু থেকে যাই। যদি পাশে থাকে প্রণয়ের ছায়া, তবে এই মুহূর্তটি বন্দি হবে আধুনিক ফ্রেমে।
ছ’মাইয়া বিলের ভৌগলিক অবস্থান নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে। শিবপুর বাসস্ট্যান্ড বা কলেজ গেট থেকে অফিস ঘাট অথবা লাকড়ি পট্টি পৌঁছাতে সিএনজি বা রিকশা নিতে পারেন। বিলের কাছাকাছি বাজারের নাম জাল্লারা। যারা ঢাকা থেকে আসতে চান, তাদের রয়াল বা মনোহরদী পরিবহনের বাসে চড়ে সরাসরি শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। ট্রেনে আসতে চাইলে প্রথমে কমলাপুর বা বিমানবন্দর আসতে হবে, এখান থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে নরসিংদী স্টেশনে পৌঁছানো যায়। নরসিংদী রেল স্টেশন থেকে ভেলানগর জেলখানার মোড় কিংবা বাজারে অটো বা রিকশা নিয়ে যেতে পারেন। এরপর শিবপুরের লোকাল বাসে উঠতে হবে এবং নামতে হবে শিবপুর কলেজ গেট বা বাসস্ট্যান্ডে। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে বাসে আসার সুযোগও রয়েছে।