স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এর একটি বড় অংশ নির্ভর করে খাবারে ব্যবহৃত তেলের ওপর। অনলাইনে তেল সম্পর্কে প্রচুর তথ্য রয়েছে, তবে সেগুলোর মধ্যে অনেকটি ভুল বা অর্ধসত্য। আসুন, তেল নিয়ে প্রচলিত ছয়টি ভুল ধারণা ও সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি জানি।
### ১. **রান্না করা অলিভ অয়েল খারাপ**
অপরিশোধিত বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্বাস্থ্যগুণ অসংখ্য। হৃদ্রোগের বিরুদ্ধে এটি অত্যন্ত উপকারী, তবে অনেকেই মনে করেন, রান্নার জন্য এটি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা কাঁচা খাবারের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর, যদি রান্নার সময় তাপমাত্রা কম রাখা হয়। তবে দিনে ২ থেকে ৪ টেবিল চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
তেলের **স্মোকিং পয়েন্ট**ও গুরুত্বপূর্ণ। অলিভ অয়েলের স্মোকিং পয়েন্ট ৩৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর বেশি তাপমাত্রায় তার গুণ কমতে শুরু করে। অন্যদিকে, সয়াবিন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ৪৫০-৪৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট, এবং শর্ষের তেলের স্মোকিং পয়েন্ট তুলনামূলক কম, ২৪৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
### ২. **যত দামি তেল, তত স্বাস্থ্যকর**
দামি তেল সবসময় স্বাস্থ্যকর নয়। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অনেক সময় অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়, যা স্বাস্থ্যকর নয়।
### ৩. **উদ্ভিজ্জ তেল অস্বাস্থ্যকর**
অনলাইনে উদ্ভিজ্জ তেলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, উদ্ভিজ্জ তেলও স্বাস্থ্যকর এবং এতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। অপরিশোধিত তেল অতিরিক্ত তাপেও গুণগত মান হারায় না, তাই রান্নায় তাতে চিন্তার কারণ নেই।
### ৪. **নারকেল তেল খাওয়া ভালো**
বিশেষ করে উপমহাদেশের কিছু অঞ্চলে নারকেল তেল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে, তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে নারকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার কারণে এটি অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। মুখের স্বাস্থ্যের জন্য এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
### ৫. **নারকেল তেলে চুল গজায়**
অনেকের ধারণা, নারকেল তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড চুল গজাতে সহায়তা করে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্নভাবে কাজ করে। নিয়মিত চুলে রং করা, হিট দেয়া বা ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করলে নারকেল তেল উপকারী হতে পারে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়।
### ৬. **তেলে ব্রণ সারে**
অনেকে মনে করেন, ত্বকে তেল ব্যবহার ব্রণ কমায়। তবে গবেষণা বলছে, এটি সত্য নয়। নারকেল তেলের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার পরও এটি তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বাড়াতে পারে।
সুতরাং, তেল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।