দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৫:১৮

লেখাপড়ায় কাটছাঁট: নড়বড়ে শিক্ষার ভিত্তি

### প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে শিক্ষার ক্ষতি

 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন সংকটের কারণে লেখাপড়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী নেওয়া হবে। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের ফলে কয়েক মাস শ্রেণিকার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় শিক্ষা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের করোনা মহামারীর সময় থেকে লেখাপড়ায় কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর, গত দুই শিক্ষাবর্ষে তীব্র দাবদাহ ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্কুল আবারও বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর পরবর্তী ধাপে চলতি বছর জুলাইয়ে অভ্যুত্থান ঘটে। এসব কারণে শিক্ষাবর্ষ শেষ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে, এবং তারা পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হচ্ছে, যা শিক্ষার ভিত্তিকে দুর্বল করছে।

 

গেল কয়েক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারাত্মক শিখন ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তবে শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই ঘাটতি পূরণের কোনো উদ্যোগ এখনও স্পষ্ট হয়নি।

 

১৯ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা পরিচালনার জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি বছরের শ্রেণিকার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানসমূহ বার্ষিক পরীক্ষার জন্য যতটুকু অংশ সম্পন্ন করতে পারবে, তার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

 

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগে শিক্ষার ক্ষতি অপূরণীয়। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি, এবং আমরা এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতির বিষয়টি বরাবরই গুরুত্বহীন রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি উত্তরের কিছু জেলায় বন্যা, পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা এবং তীব্র আবহাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ক্ষতি হচ্ছে।

 

ধানমন্ডি ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বারবার পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত করে শিক্ষার্থীদের পাস করানো হচ্ছে, কিন্তু তাদের দক্ষতা তৈরির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। করোনা মহামারীতে অটো পাস দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা খুশি, কিন্তু এর ফলে তাদের মধ্যে শিক্ষার গভীরতা হারাচ্ছে।

 

একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এক শিক্ষাবর্ষে ক্লাসের সংখ্যা ও ছুটির দিন হিসেব করে পাঠ্যবিষয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু যদি কাটছাঁট করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের যে যোগ্যতা তৈরি হওয়ার কথা, তা নষ্ট হচ্ছে।

 

গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। ১৬ জুলাই সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং ১৮ আগস্ট সেগুলো খুলে দেওয়া হয়।

 

এর আগে, তীব্র দাবদাহের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১০ দিন বন্ধ ছিল এবং জানুয়ারিতে ১৪ জেলায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় স্কুল বন্ধ ছিল শৈত্যপ্রবাহের জন্য। করোনা মহামারীর সময় শ্রেণিকার্যক্রম প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল, ফলে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট