সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার আবারও বড় দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। তাতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গত দুই মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। অর্থাৎ দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সূচকটি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জেরে কয়েক দিনের বড় উত্থানে সূচকটি বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। এরপর দেখা দেয় উত্থান-পতন, তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে আবারও দুই মাস আগের অবস্থানে ফিরেছে।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ারবাজারে যে গতি ফিরেছিল, সেই গতি আবারও স্তিমিত হয়ে পড়েছে। শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আবারও চিড় ধরেছে। যার কারণে ব্যক্তিশ্রেণি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে অংশগ্রহণ কমে গেছে। তাতে শেয়ারের দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এ কারণে লেনদেন কমে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের বড় পতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ইসলামী ব্যাংকের। এদিন ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ৬ টাকা ১০ পয়সা দরপতনে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৪৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ গতকাল ডিএসইএক্সের অর্ধেকের বেশি কমেছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনের কারণে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও এদিন লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টিরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৯টির।
ব্যাংকের পাশাপাশি ভালো মৌলভিত্তির অন্যান্য শেয়ারেরও দরপতন হয়েছে, যা সূচকের পতনে বড় ভূমিকা রেখেছে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের ১ শতাংশ বা ২ টাকা ৪০ পয়সা দরপতনে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৬ পয়েন্টের বেশি। আর সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিমের শেয়ারের ৫ শতাংশ বা ৩ টাকা দরপতনে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৬ পয়েন্ট। আর অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের ৯ টাকা বা ৫ শতাংশের বেশি দরপতনে সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জহোলসিম ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দরপতনে ডিএসইএক্স সূচক ৬১ পয়েন্ট কমেছে।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ এখন বাজারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। দরপতন হতে থাকায় এসব বিনিয়োগকারী ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছেন। যার কারণে বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না।
এ অবস্থায় দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি দল আজ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন।
এদিকে ব্যাংক খাতসহ ভালো মৌলভিত্তির বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতনে ঢাকার বাজারে এক দিনেই বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। অর্থাৎ এদিন দরপতন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিট সম্মিলিতভাবে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দর হারিয়েছে। ঢাকার বাজারে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৬৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫২ কোটি টাকা বেশি। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮০টিরই দাম বেড়েছে, দাম কমেছে ১৫৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৬টির দাম।