চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নামিয়ে দেওয়া, আসন বাণিজ্য এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলি একাধিকবার সংবাদে উঠে এসেছে। তবে পরিস্থিতি এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। আবাসিক হলগুলিতে শৃঙ্খলা ফিরেছে এবং ক্যাম্পাসের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছেন এবং অধিকার আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন।
হলগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরার লক্ষণ
মাস দুয়েক আগে পর্যন্ত আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের একক দখল ছিল। প্রতিটি হলে নেতা-কর্মীদের নামে কক্ষ বা ‘রাজনৈতিক ব্লক’ ছিল। আসন দখলের কৌশল হিসেবে তাঁরা ‘রুমওয়ার্ক’ ও ‘জয় বাংলা ব্লাড স্কিম’ ব্যবহার করতেন। সুপারিশ ছাড়া আবাসিকতা পাওয়া কঠিন ছিল, এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়া ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছিল। খাবার খেয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগও ছিল। আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি ও আসন বরাদ্দের নিয়ম কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আবাসিক হলের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এখন আর কোন দলীয় ছাত্রসংগঠনের দখল নেই। ‘রাজনৈতিক ব্লক’ এবং কক্ষগুলোরও অবসান ঘটেছে। প্রশাসনের নির্দেশনার পর অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করছেন। হল প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় হলগুলো অস্ত্রমুক্ত হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকতার আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা গেস্টরুমে নির্দ্বিধায় আড্ডা দিতে পারছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ডাইনিংয়ের টেবিল বয় আকবর আলী বলেন, “আগে ছাত্রলীগের কিছু নেতার কাছে খাবার দিতে যেতে হতো এবং টাকা চাইলে বলত ‘বড় ভাই’ দেবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং হলের পরিবেশ শান্ত আছে।”
ছাত্র সংসদ ভিত্তিক রাজনীতির চাহিদা
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে এবং বিপক্ষে আলোচনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনেকেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) চালুর পক্ষে মতামত প্রকাশ করছেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসে, সেই দলের ছাত্রসংগঠনই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে এবং শিক্ষার্থী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। এজন্য তাঁরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চালুর জন্য আগ্রহী।
অধিকার আদায়ে সোচ্চার
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। নানা অনিয়ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, গণযোগাযোগ, ফলিত গণিত বিভাগে ‘বিভাগ সংস্কার’ শিরোনামে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসন, দ্রুত পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং নিয়মিত ক্লাসের দাবী জানিয়েছেন।
এছাড়া, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চারজনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এভাবে, শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলের নেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ছবিসহ ব্যানার সাঁটিয়েছেন, যেখানে তাঁদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “অস্থিরতা কাটিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “অচলাবস্থার পর আমরা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছি এবং হলের অবৈধ আসনগুলো দখলমুক্ত করেছি।”