দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ১৩:৫৪

গ্যামোফোবিয়া: বিবাহের প্রতি ভীতি

বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যা একটি পরিবারের ভিত্তি গড়ে তোলে। ছোটবেলা থেকে মানুষ বিয়ের মাধ্যমে পরিবারের সাথে পরিচিত হয় এবং সেখানে সৃষ্টি হয় প্রেম, ভালবাসা, মায়া-মমতা ও স্নেহ। কিন্তু অনেকেই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে বৈবাহিক জীবনের প্রতি ভয় বা ভীতি অনুভব করেন। কারণ, বিয়ের মাধ্যমে দুই ব্যক্তি এক ছাদের নীচে বসবাস শুরু করেন, তাই কখনও মনোমালিন্য বা ঝগড়া হবে না এমন আশা করা ভুল। ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক। এ থেকেই অনেকের বিয়ের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা বিয়ের নাম শুনলে ভয় পান। তারা মনে করেন, বিয়ে মানে এক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে বের হতে না পারার একটি ভীতি। এই বিয়ে ভীতি বা অনীহা আসলে একটি মানসিক সমস্যা, যা গ্যামোফোবিয়া নামে পরিচিত।

 

গ্যামোফোবিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে, যেখানে “গ্যামো” মানে বিয়ে এবং “ফোবিয়া” মানে ভয়। এটি দুশ্চিন্তাজনিত ব্যাধির অন্তর্ভুক্ত, যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে তীব্র ভয়ের অনুভূতি দেয় এবং তাদের ভেতরে ভীতি সঞ্চার করে। গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিয়ে বা স্থায়ী সম্পর্কের দিকে যেতে ভয় পান। সহজ কথায়, তাদের মধ্যে রোমান্টিক বা বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভয় কাজ করে।

 

১৯৮৭ সালে ‘মেন হু কান্ট লাভ’ নামের একটি বইয়ে প্রথমবারের মতো কমিটমেন্ট ফোবিয়া (প্রতিশ্রুতি ভীতি) শব্দটি উল্লেখ করা হয়। বইটি পুরুষদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ভীতির কথা বলার জন্য সমালোচিত হয়, ফলে ১৯৯৫ সালে লেখক লিঙ্গ নিরপেক্ষ একটি দ্বিতীয় বই প্রকাশ করেন, যার নাম ‘হি ইজ স্কেয়ারড, শি ইজ স্কেয়ারড’।

 

গ্যামোফোবিয়া হলো বিয়ে বা কোনও স্থায়ী সম্পর্কে জড়িত হওয়ার ভয়। যারা মানসিকভাবে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত, তারা নতুন সম্পর্ক নিয়ে আতঙ্কিত থাকেন এবং বিবাহিত জীবন নিয়ে ভীতি অনুভব করেন। তারা মনে করেন, তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে বা মানিয়ে চলা সম্ভব হবে কি না।

 

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

– অস্থিরতা, বুকে ব্যথা

– নিশ্বাস নিতে সমস্যা

– ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া

– হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

– আতঙ্কের কারণে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা

– সঠিকভাবে কথা বলতে না পারা

– মাথাব্যথা

– হঠাৎ রেগে যাওয়া

– ঘাম, পানির তৃষ্ণা

– কাঁপুনি

 

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

– দীর্ঘমেয়াদি রোমান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখতে অক্ষমতা

– হাসিখুশি যুগলকে দেখে দুশ্চিন্তা অনুভব করা

– হঠাৎ করে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানো

– কেউ কাছে আসতে চাইলে তাকে দূরে চলে যেতে বলা

– যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্ক জড়ালে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাবোধ করা

 

গ্যামোফোবিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন: বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বা সত্যিকার প্রেমের ভেঙে যাওয়া। অনেকেই মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন যে কাউকে আর তাদের আপন মনে হয় না। এ ধরনের পরিবার থেকে আসা ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় এই রোগে ভোগেন।

 

এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য সাইকোলজিস্টদের কাউন্সেলিং প্রয়োজন। আক্রান্তদের সাথে ধৈর্য সহকারে চলতে হবে এবং কোনো কিছু চাপ না দিয়ে সম্পর্কের গুরুত্ব ও গভীরতা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। একসময় তারা বিয়ের মতো সুন্দর সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হবে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট