ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ছুটতে ছুটতে নিজের যত্ন নেওয়ার সময় পান না। হঠাৎ একদিন ওয়েটিং স্কেলে উঠে দেখলেন আপনার ওজন অনেকটা বেড়ে গেছে। কাজের চাপে অপর্যাপ্ত ঘুম, মধ্যবেলায় শিঙাড়া, বন্ধুদের সঙ্গে ফাস্ট ফুড এবং অফিসের গাড়ি থেকে নেমে লিফট ব্যবহার—এসবের ফলে আপনার ওজন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হয়তো ব্যায়ামের জন্য সময় বের করতে পারছেন না, আর অনলাইনে দেখা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা কিটো ডায়েট নিয়ে আপনার মনে সংশয় রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, জিমে না গিয়ে বা কঠিন ডায়েট না মানলেও কি ওজন কমানো সম্ভব? এই হতাশা অনেকের মধ্যেই বাসা বাঁধে। চলুন, কিছু সহজ টিপস জেনে নিই, যেগুলো আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
### ক্যালরি হিসাব রাখুন
যখন ক্যালরি গ্রহণ বেশি হয় এবং খরচ কম হয়, তখন বাড়তি ক্যালরিটুকু শরীরে জমা হয়ে ওজন বাড়ায়। তাই খাবারের ক্যালরি সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অনেকেই ভাবেন দুপুরে ভাত খাব না, বরং দুটি শিঙাড়া খেয়ে নিই। কিন্তু একটি শিঙাড়ায় দুই প্লেট ভাতের সমপরিমাণ ক্যালরি থাকতে পারে। তাই ক্যালরি কম এ ধরনের ডায়েট চার্ট তৈরি করুন এবং অনুসরণ করুন।
### অল্প পরিমাণে বারবার খান
‘থ্রি মিল, থ্রি স্ন্যাকস’ অর্থাৎ তিন বেলা নিয়মিত খাবার এবং মাঝে মাঝে স্ন্যাকস খান। সকালের নাশতায় আমিষজাতীয় খাবার যেমন একটি ডিম, মধ্যসকালে একটি কাপ গ্রিন-টি, বিকেলে কিছু বাদাম এবং রাতে একটি কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ রাখতে পারেন।
### সময় নিয়ে খাবার খান
ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণ খাবার খান। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান। মস্তিষ্ককে সিগন্যাল পাঠাতে কিছু সময় লাগে, তাই একটু ধীরে খেলে কম খাওয়া হবে এবং পেট ভরে যাবে।
### ছোট প্লেটে খান
আজকের দিনে আমাদের খাবারের প্লেট বড় হয়ে গেছে, যা আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করছে। একটু ছোট প্লেট ব্যবহার করুন, এতে মনে হবে অনেক খাবার নিয়েছেন। প্লেটের দুই ভাগ সবজি, এক ভাগ প্রোটিন এবং এক ভাগ কার্বোহাইড্রেট দিয়ে মিল সাজান।
### প্রোটিন বেশি খান
প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন রাখুন। প্রোটিন দীর্ঘসময় পেটে থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে।
### বাসায় তৈরি খাবার খান
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বাসায় তৈরি খাবার খান, তাদের ওজন বাইরের খাবার যাদের, তাদের তুলনায় বেশি কমেছে। স্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহার করে ঘরে তৈরি কিছু রেসিপি চেষ্টা করুন, যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
### আঁশযুক্ত খাবার খান
আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ওটস, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও শস্য পাকস্থলীতে দীর্ঘসময় থাকে, যা ক্ষুধা কমায় এবং খাবার গ্রহণ কমাতে সহায়তা করে।
### পর্যাপ্ত পানি পান করুন
দিনে ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। খাবারের আগে আধা লিটার পানি পান করলে পেট ভরা লাগে এবং খাবার কম খাওয়া হয়। তবে মিষ্টিজাতীয় খাবার ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
### বদভ্যাস ছেড়ে সুঅভ্যাস গড়ুন
খেতে খেতে টিভি দেখা বা ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে অন্যমনস্কভাবে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই খাবারের সময় অন্য কার্যকলাপ ত্যাগ করুন। খেতে বসে শুধু খাবারের দিকে মনোযোগ দিন। জিমে যেতে না পারলেও সকালে নাশতার আগে ২০ মিনিট হাঁটুন, লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, এবং অফিসে যাওয়ার সময় সম্ভব হলে সাইকেল ব্যবহার করুন।
### পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ ক্ষুধা বাড়ায় এবং খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।