ঢাকার পাশে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে কাঠগড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে তিন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল থেকে অধিকাংশ শিল্পকারখানায় কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। তবে সকালে বন্ধ থাকা লুসাকা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। শ্রমিকেরা সম্প্রতি তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি করেন। একপর্যায়ে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলে শ্রমিকেরা সেখান থেকে সরে যান। সকালে মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও তাঁদের কারখানার দুজন শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে দাবি করে কারখানা-সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর এ দুটি কারখানার শ্রমিকেরা আশপাশের কারখানার সামনে গেলে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে কাঠগড়া এলাকায় এআর জিনস ও ক্রস ওয়্যারের শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও ক্রস ওয়্যার কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ক্রস ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ছুটি দেওয়ার পর শ্রমিকেরা এআর জিনস কারখানার সামনে আসেন। ওই সময় এআর জিনস কারখানার ভেতরের দিক থেকে ক্রস ওয়্যারের শ্রমিকদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। এতে দুই-তিনজন শ্রমিক আহত হন। তাঁদের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে উভয় কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ক্রস ওয়্যার কারখানার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কারখানায় সমস্যার কারণে তাঁদের কারখানা ছুটি দেওয়া হয়। পরে শুনেছেন, শ্রমিকেরা চলে যাওয়ার সময় পাশের একটি কারখানা থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ক্রস ওয়্যার লিমিটেডের মোমিনুল ইসলাম (৩০) নামের এক শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনচার্জ মো. ইউসুফ।
এদিকে আজ দুপুরে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) থেকে জানানো হয়, সাভার ও আশুলিয়ায় ২৭২টি পোশাক কারখানার মধ্যে ১৪টি কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬–এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ বা ছুটি আছে ৫১টি কারখানায়। আগস্ট মাসের বেতন এখনো পরিশোধ করেননি চারটি কারখানার মালিক।
ছুটি ঘোষণা করা একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা জানান, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোতে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিলেন খোলা থাকা কারখানার শ্রমিকেরা। তবে বন্ধ থাকা লুসাকা গ্রুপ ও মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেডের নামে কারখানার শ্রমিকদের অসন্তোষের জেরে জিরাবো থেকে বিশমাইল পর্যন্ত এলাকায় খোলা থাকা অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
লুসাকা গ্রুপের এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেস (মামলা) নিয়া যত ঝামেলা। আমাদের কেস ওঠাচ্ছে না, এইটা নিয়াই এখন যত সমস্যা। এই মাসের শুরুর দিকে আমাদের ১০৭ জনের নামে ফ্যাক্টরি ভাঙচুরের কেস করা হইছে। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি সবাইরে প্রতিটা ফ্লোর দেখাইছি কোনো ভাঙচুর হইছে কি না। তারাও বলছে, কোনো ভাঙচুর হয় নাই। এরপর মালিকপক্ষ বলল, “৭ দিনের সময় দাও, তোমাদের মামলা তুলে নিচ্ছি।” আর কোনো খোঁজখবর নাই। কাজ না করলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। আজ দুই দিন ধইরা ফ্যাক্টরির সামনে গিয়া দেখি, ফ্যাক্টরি বন্ধ।’
ওই শ্রমিক আরও বলেন, আজ রোববার গেটে গিয়ে দেখেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা আছেন। তাঁরা কারখানা খোলার কথা বলেন। একটু পর সেনাবাহিনীর আরও সদস্য আসা দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে যান।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ছুটি ঘোষণা করা ম্যাসকট গ্রুপের কারখানার এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল পৌনে ১০টার দিকে ছুটি দিয়া দিছে। সব জায়গায় গ্যাঞ্জাম। আমাদের অফিস কাজ করতেছিল ঠিকই। পাশের লুসাকার কয়েকজন গিয়া বলছে ছুটি দিতে। সকালে ভালোমতোই কাজ চলছিল।’
টেক্সটাউন লিমিটেডের নামের একটি কারখানার শ্রমিক বলেন, সকালে দেড় ঘণ্টার মতো কাজ চলেছে। সাড়ে নয়টার পরই ছুটি হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বেশ ঝামেলার মধ্যে আছেন। একটি অফিস ছুটি দিলে ওই অফিসের শ্রমিকেরা অন্য অফিসের সামনে এসে ইটপাটকেল মারেন, ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি দেখে সবাই ছুটি দিতে বাধ্য হন।
গত কয়েক দিনের মতো আজও সাভার ও আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানায় বন্ধ ও সাধারণ ছুটি রয়েছে। আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, আজ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় ১১টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি রয়েছে ৬টি কারখানায়। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সকালে মণ্ডল ও লুসাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ছাড়া এআর জিনস ও ক্রস ওয়্যারের শ্রমিকদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও কিছু সময় পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।