লর্ডসে ওয়ানডে হচ্ছে ১৯৭২ সাল থেকে। এই ৫২ বছরের মধ্যে লর্ডসে দ্রুততম ওয়ানডে ফিফটির নতুন রেকর্ড দেখা গেল গতকাল রাতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ ওয়ানডেতে। ২৭ বলে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে ২৫ বলে ফিফটি তুলে নেন লিয়াম লিভিংস্টোন। এর মধ্যে মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের শেষ ওভারে চার ছক্কাসহ একাই তুলেছেন ২৮ রান! ছেলেদের ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলারের এটাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার।
বৃষ্টির কারণে ৩৯ ওভারে নেমে আসা এই ম্যাচে বড় জয়ও পেয়েছে ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩১২ রান তোলার পরে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ২৪.৪ ওভার টিকতে দিয়েছেন ম্যাথু পটস-ব্রাইডন কার্সরা। অস্ট্রেলিয়া এর মধ্যেই ১২৬ রানে অলআউট হয়ে ১৮৬ রানের ব্যবধানে হার মেনেছে। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরল ইংল্যান্ড। ব্রিস্টলে আগামীকাল সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।
বড় রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ছক্কার মার মাত্র ৪টি, যেখানে লিভিংস্টোন একাই মেরেছেন ৭ ছক্কা। মোট ১৬ ছক্কার এই ম্যাচে লর্ডসে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড হয়েছে ইংল্যান্ডের ইনিংসে ১২টি ছক্কার কল্যাণে।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের হয়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়েছেন অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক ও বেন ডাকেট। ৫৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন ব্রুক এবং ওপেনার ডাকেটের ব্যাট থেকে এসেছে ৬২ বলে ৬৩। ৩৭ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া ব্রুক তৃতীয় উইকেটে ডাকেটের সঙ্গে ৫৩ বলে ৭৯ এবং চতুর্থ উইকেটে জেমি স্মিথের সঙ্গে ৪৭ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন। শেষ ১৫ ওভারে ১৫৬ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬৬ রানে ২ উইকেট লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শুরুটা ভালো করেছিলেন দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শ। ৮.৪ ওভারে হেড (২৩ বলে ৩৪) আউট হওয়ার আগে মার্শের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেছেন ৬৮ রান। কার্স হেডকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরের ওভারে স্টিভেন স্মিথকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান পটস। এরপর ১২ থেকে ১৬ ওভারের মধ্যে আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে জয়ের পথ থেকে ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। চোট থেকে ফেরা ইংল্যান্ড পেসার জফরা আর্চার মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি ৯৩ মাইল গতিতে বোলিংও করেছেন। তবে দিনটা ছিল পটসের। ৩৮ রানে ৪ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৩৪ রান এসেছে হেডের ব্যাট থেকে। বড় রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ছক্কার মার মাত্র ৪টি, যেখানে লিভিংস্টোন একাই মেরেছেন ৭ ছক্কা। মোট ১৬ ছক্কার এই ম্যাচে লর্ডসে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড হয়েছে ইংল্যান্ডের ইনিংসে ১২টি ছক্কার কল্যাণে।
লিভিংস্টোনের ইনিংস নিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ব্রুক বলেছেন, ‘সে অবিশ্বাস্য ভালো মেরেছে। আমরা সবাই জানি শেষের দিকে সে কী করতে পারে।’ নিজের ইনিংস নিয়ে ব্রুকের ভাষ্য, ‘মনে হচ্ছে গোটা গ্রীষ্মেই ভালো খেলছি। আমার জন্য সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচ বিশেষ কিছুই।’
পিঠের চোটের কারণে এই ম্যাচে অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনকে পায়নি অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড সফর তাঁর শেষ হয়ে গেছে। নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তাঁর খেলা নিয়ে শঙ্কা আছে। হারের পর অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মার্শ বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে আমাদের অনেক চাপে ফেলেছিল। আমরা শুরুতে উইকেট পাইনি এবং আজ (গতকাল রাতে) তারা সবদিক থেকেই আমাদের পর্যুদস্ত করেছে। দারুণ ইনিংস খেলেছে লিয়াম লিভিংস্টোন।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৩৯ ওভারে ৩১২/৫ (ব্রুক ৮৭, ডাকেট ৬৩, লিভিংস্টোন ৬২*, স্মিথ ৩৯, সল্ট ২২; জাম্পা ২/৬৬, মার্শ ১/২৭, হ্যাজলউড ১/৪০, ম্যাক্সওয়েল ১/৩০)।
অস্ট্রেলিয়া: ২৪.৪ ওভারে ১২৬ (হেড ৩৪, মার্শ ২৮, ক্যারি ১২; পটস ৪/৩৮, কার্স ৩/৩৬, আর্চার ২/৩৩)
ফল: ইংল্যান্ড ১৮৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড)।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২–২ ব্যবধানে সমতায় ইংল্যান্ড।