চলমান পরিস্থিতিতে দলীয় নেতা–কর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘কোনো রকমের চাঁদাবাজি, দখল, নিপীড়ন, অত্যাচারের মধ্যে যাওয়া যাবে না। গেলে কী হয়, সেটা তো দেখলাম আমরা। সবাই সাংগঠনিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন, সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করুন।’
আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর পরিবারকে একটি কাপড়ের দোকান করে দিয়েছে বিএনপি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আহত আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান। কিন্তু কোনো রকমের চাঁদাবাজি, দখলদারি, অত্যাচার-নিপীড়নের কাজে যুক্ত হবেন না। যাঁরা দলের হুকুম ও সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাঁরা দলের লোক নন।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে দেশের দুঃসময় যাচ্ছে। আমরা গণতন্ত্র ফিরে পাইনি এখনো। আমরা স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। যখন এ দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে, তাদের ভোটে সরকার গঠিত হবে, তখন বুঝতে পারব গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। সে জন্য যখন কাজ চলছে, তখন পরাজিত শক্তি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। সে সময় আরও যারা বিশৃঙ্খলা করবে, তাদেরকে কি আমাদের লোক বলব, না পরাজিত শক্তির বলব।’
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ, জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য সালমান ওমর, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান প্রমুখ।
আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আহত মানুষের পাশে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যে লড়াইয়ে আমাদের সাথিরা জীবন দিলেন, এ লড়াইটা দীর্ঘদিনের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। ১৬ বছর ধরে আমাদের এ লড়াইটা চলেছে। আমাদের হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছে। আমাদের সাত শর বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়েছে। এই যে লড়াই, তার একটা পর্যায়ে এসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হলো এবং দেশ থেকে স্বৈরাচারের বিদায় হলো।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়েছিলাম। রাজি হয়নি, দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আমরা বলেছিলাম একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। পদত্যাগ করা লাগবে না, যারা জিতবে তারা ক্ষমতায় আসবে। পদত্যাগের লজ্জাও হবে না। সেটাও রাজি হয়নি। এখন পদত্যাগও করলেন, দেশ ত্যাগও করলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম অপমান, এ রকম লজ্জা কারও কপালে আসবে না। অত্যাচার–নিপীড়ন করলে এমনই হয়।’
ধোবাউড়ায় সভা শেষে নজরুল ইসলাম খান রাত ৮টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রেদোয়ান হোসেন সাগরের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি রেদোয়ানের স্বজনদের সমবেদনা জানান ও কবর জিয়ারত করেন।