কানপুরে বৃষ্টি পড়ছিল গতকাল রাত থেকেই। কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো অঝোর ধারায়। আজ সকালে বৃষ্টি না এলেও আকাশ ছিল মেঘলা। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে, অবস্থাটা ছিল এমন। এর মধ্যেই কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় ভরে যায় দর্শকে।
তিন বছর পর ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে, সেই রোমাঞ্চ অনুভব করতেই ঝড়বৃষ্টির উপেক্ষা করে মাঠে এসেছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ দর্শক। কিন্তু বৃষ্টি কেড়ে নিল কানপুর টেস্টের প্রথম দিনের প্রায় দুই সেশনের খেলা।
সারা দিনে খেলা হয়েছে মাত্র ৩৫ ওভার, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দল যা ব্যাটিং করেছে, তা প্রশংসা করার মতো। বৃষ্টিতে দিনের খেলা আগেভাগেই শেষ হওয়ার আগে ৩ উইকেট ১০৭ রান করেছে বাংলাদেশ।
আগের রাতের বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ড ভেজা থাকায় খেলা শুরু হলো নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। টসে জিতে ভারত বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত ২৬ ওভার খেলা হয়। এরপর আবার বৃষ্টি নামলে ৪০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। সে সময় দুই দল লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ৯ ওভার খেলা হওয়ার পর ঝুম বৃষ্টি নামে। এতটাই যে আম্পায়াররা দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
মেঘলা কন্ডিশনে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন ভারতের পেসাররা। বুমরা, সিরাজ ও আকাশদীপরা বারবার বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করেছেন। সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ছিলেন আকাশদীপ। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের রানের গতি কমিয়েছেন, বাড়িয়েছেন চাপ। উপহার হিসেবে পেয়েছেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলামের উইকেট।
অশ্বিন আজ আরও একবার দেখিয়েছেন, তিনি কেন টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বাঁহাতি ঘাতক।
পরে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আউট হয়েছেন আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেনও। তবু এমন পেস সহায়ক কন্ডিশনে টসে জিতে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারে দ্রুত ফাটল ধরাতে পারেনি ভারত। সব মিলিয়ে আগে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ তহওয়ার আগে যতটুকু খেলা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ–ভারত সমানে সমান।
ওপেনার জাকির আজ ২৪ বল খেলে কোনো রান না করে আউট হয়েছেন। আর সাদমান ৩৬ বলে ২৪ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। তবে দুজনের ৫১ বলে ২৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ছোট হলেও নাজমুল ও মুমিনুলের কাজটা কিছুটা হলেও সহজ করেছে।
নাজমুল ইনিংসের শুরুতে আক্রমণাত্মক ছিলেন। মুমিনুল খেলছিলেন ছেড়ে ছেড়ে। টপ অর্ডারে বাঁহাতি বেশি হওয়ায় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ইনিংসের অষ্টম ওভারেই বোলিংয়ে আনেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। নাজমুল প্রতি আক্রমণে অশ্বিনকে ভালোই সামলাচ্ছিলেন।
কিন্তু অশ্বিন আজ আরও একবার দেখিয়েছেন, তিনি কেন টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বাঁহাতি ঘাতক। অফ স্টাম্পের বাইরে লম্বা সময় ধরে ফ্লাইট মেশানোর বল দেওয়ার পর ইনিংসের ২৮ তম ওভারে আসে অশ্বিনের স্টাম্প তাক করা আর্ম বল। গতিময় সে বলটি সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ নাজমুল। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়কের। দারুণ শুরুর পরও ৫৭ বলে ৩১ রানে থামে তাঁর ইনিংস।
ওপাশে মুমিনুল টিকে থাকায় রক্ষা। তিনি অশ্বিনের বলে এক-দুই রান নিয়েছেন। বুমরার বলে খেলেছেন আপার কাট। কখনো সেটি গিয়েছে কিপারের ওপর দিয়ে, কখনো স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে। তবে বৃষ্টিতে খেলা থামার আগে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের ভরসার নাম। ৮১ বল খেলে ৭টি চারে ৪০ রানে অপরাজিত আছেন তিনি, মুশফিক খেলছেন ১৩ বলে ৬ রানে। ২ উইকেট নেওয়া আকাশ দীপ ছিলেন আজ ভারতের সেরা বোলার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৫ ওভারে ১০৭/৩ (জাকির ০, সাদমান ২৪, মুমিনুল ৪০*, নাজমুল ৩১, মুশফিক ৬*; আকাশ দীপ ২/৩৪, অশ্বিন ১/২২, বুমরা ০/১৯, সিরাজ ০/২৭)।
* ১ম দিনের খেলা শেষে, টস: ভারত।