গত এক শতকে বিশ্বে নারীর উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে অনেক পরিবর্তন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নারীরা রক্ত ঝরিয়েছেন, রাজপথ কাঁপিয়েছেন, তবে তাও তারা বঞ্চনার অন্ধকার থেকে মুক্তি পাননি। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন নারীরা মানসিক স্বাস্থ্য থেকে। দেশে নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হলেও, মানসিক স্বাস্থ্য প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রধানত বিষণ্নতার কারণে হয়, এবং নারীরা এই সমস্যায় পুরুষের তুলনায় চারগুণ বেশি ভোগেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৮.৭ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত, যেখানে নারীদের আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ। নারীর মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের বিষণ্নতার কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহ, যৌতুক প্রথা, শৈশবকালীন আঘাত, এবং সামাজিক বৈষম্য উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের চাপ এবং দায়িত্ব পালনের ফলে উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ‘কনভার্শন ডিসঅর্ডার’ হিসেবে পরিচিত।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ বছর বয়সের আগে ৭৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। নারীদের মধ্যে অস্থিরতা এবং অবসাদের প্রবণতা অনেক বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের গবেষণা অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের টিনএজ মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য প্রথমে তাদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক জানান, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধি হলেও তা এখনও যথেষ্ট নয়। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে নারীদের কর্মক্ষমতা এবং সম্পর্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ঢাকাসহ নয়টি বিভাগীয় জেলায় রিজিওন্যাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারগুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কর্মজীবী নারীদের জন্য মানসিক চাপের মোকাবিলা গুরুত্বপূর্ণ। কাজের পরিবেশে সমস্যাগুলো আলোচনা করা এবং পরিবার থেকে সমর্থন নেয়া আবশ্যক। এছাড়া ঘরের কাজের চাপের মুখে নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।