বিভিন্ন কারণে আজকাল অনেকেই ওজন কমাতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর দিকে ঝুঁকছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়ন্ত্রিত ফাস্টিং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং সেই সঙ্গে ওজনজনিত রোগব্যাধিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমিয়ে আনে, যার ফলে ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি শরীরের ইনসুলিন লেভেল কমিয়ে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ বাড়ায় এবং চর্বি ঝরানোর হরমোন নোরাড্রেনালিনের নিঃসরণও বৃদ্ধি করে। ফলে পেটের চারপাশের ক্ষতিকর চর্বি কমতে শুরু করে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে।
তবে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সফলতা নির্ভর করে কম ক্যালোরি গ্রহণের উপর। তাই খাবারের সময় যদি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, তবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
### পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আনোয়ারা পারভীন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু পদ্ধতি হলো:
1. **১৬/৮ ঘণ্টা ফাস্টিং:**
এই পদ্ধতিতে সকালের নাস্তা বাদ দিন এবং দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করুন। এরপর ১৬ ঘণ্টা উপোস রাখুন। রাতের খাবারের পর তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলে ঘুমানোর সময়েই ৭-৮ ঘণ্টা ফাস্টিং হয়ে যাবে।
2. **খান-থামুন-খান:**
প্রতি সপ্তাহে ১ বা ২ দিন ২৪ ঘণ্টা কোনো খাবার থেকে বিরত থাকুন। উদাহরণস্বরূপ, একদিন রাতের খাবার খেয়ে পরদিন রাতের খাবার খান।
3. **৫/২ ডায়েট:**
প্রতি সপ্তাহে পরপর ২ দিন ৫০০ থেকে ৬০০ ক্যালোরির খাদ্য গ্রহণ করুন। বাকি দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবে খাবার খান।
### খাবারের পছন্দ
ফাইবারে ভরপুর ফল এবং শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। অঙ্কুরিত ছোলা, চিকেন, অল্প তেলে রান্না করা মাছ, স্যালাড, সবজির তরকারি, এবং ডিম খেতে পারেন। ব্রাউন রাইস খাওয়া ভালো। ব্রকোলি, আলু, আখরোট, পপকর্ন, এবং গোটাশস্য বেশি করে খান।
তাজা ফলের মধ্যে এমন ফল বেছে নিন যেগুলো মিষ্টি কম, যেমন আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, আনার, জাম, এবং আমলকি।
একটি ডায়েট চার্ট তৈরি করে রাখুন, যাতে কখন কী খাবেন এবং কতটা খাবেন তা স্পষ্ট থাকে। ফাস্টিংয়ের পর অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না।
### ফাস্টিং এড়ানো উচিত
যদি আপনার আন্ডারওয়েট সমস্যা থাকে অথবা ইটিং ডিজঅর্ডার থেকে থাকেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা উচিত নয়।
মনে রাখবেন, খাবারের সময় যদি জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন, তবে ফাস্টিং কোনো কাজে আসবে না। ফাস্টিংয়ের সময় নিম্নলিখিত খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন: সোডা, অ্যালকোহল, ভাজা খাবার, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, সরল শর্করা, এবং প্রদাহ বৃদ্ধিকারী তেল।