শরীরটি অসংখ্য ক্ষুদ্র কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষগুলো নির্দিষ্ট সময়ে মারা যায় এবং পুরনো কোষগুলোর স্থানে নতুন কোষ আসে। সাধারণভাবে, কোষগুলো নিয়মিতভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। তবে যখন কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন ত্বকের নিচে মাংসের দলা বা টিউমার দেখা যায়। টিউমার বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে, এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলা হয়। স্তনে ক্যান্সার হলে সেটি স্তন ক্যান্সার।
স্তন ক্যান্সার সাধারণত নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষদেরও এটি হতে পারে। ডাক্তাররা বলছেন, স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন সেগুলো টিউমারে পরিণত হয়। ডাক্তার নুসরাত জানান, ৩০ বছরের পর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে। দেরিতে বিয়ে ও সন্তান নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, চর্বি ও প্রাণীজ আমিষের আধিক্য, এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
স্তন ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকির কারণগুলো হল:
1. **পারিবারিক ইতিহাস**: মা, বোন, বা অন্য আত্মীয়দের স্তন ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
2. **বয়স**: ৫০ বছরের পর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
3. **দেরিতে প্রথম সন্তান**: ৩৫ বছরের পর গর্ভধারণ করলে ঝুঁকি বাড়ে।
4. **দীর্ঘকাল ইস্ট্রোজেনের সংস্পর্শ**: অল্প বয়সে মাসিক শুরু হলে বা হরমোন থেরাপি নিলে ঝুঁকি বাড়ে।
5. **স্থূলতা**: অতিরিক্ত ওজন এবং চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।
স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ:
– স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
– বগলে বা স্তনে শক্ত চাকা, সাধারণত ব্যথাহীন।
– চামড়ার পরিবর্তন, যেমন শক্ত হওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া।
– বোঁটার পরিবর্তন।
**চিকিৎসা**:
1. **অপারেশন**: প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অপারেশন করা হয়। বড় হলে কেমোথেরাপির মাধ্যমে ছোট করা হয়।
2. **কেমোথেরাপি**: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়।
3. **রেডিওথেরাপি**: ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
4. **হরমোনথেরাপি**: হরমোন সংবেদনশীল টিউমারের জন্য প্রযোজ্য।
5. **ইমিউনোথেরাপি**: কিছু রোগীর জন্য নির্দিষ্ট প্রোটিনের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি নারী আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মারা যায়। সুতরাং, সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।