বর্তমানে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজলভ্য উপায়। আগে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে রান্না করা হতো মাটির চুলা, বন্ধুচুলা, স্টোভ এবং কাঠের ভুসির চুলায়। তবে সময়ের সাথে সাথে গ্রামে এখনো চুলার ব্যবহার দেখা যায়। যদিও গ্যাসের চুলা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ হতে পারে।
বায়ু দূষণের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণত কল-কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে হয়। তবে রান্নার সময়ও বায়ু দূষণ ঘটে, যা অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। রান্নার ফলে ঘরের ভেতর বায়ুদূষণ হয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়।
হাঁপানি একটি রোগ যা সরাসরি শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে, ফলে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং শ্বাসক্রিয়ার সময় বায়ু প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। ইনহেলার ব্যবহার ও অ্যাজমা প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার একটি জরিপে দেখা যায়, দূষিত বায়ুর কারণে ১২% শিশুর হাঁপানি হচ্ছে, যেখানে ৩৮% মানুষ রান্নায় গ্যাস ব্যবহার করে। এদের ঘরের বাতাসে পাওয়া যায় কার্বন মনোক্সাইড, যা অত্যন্ত বিষাক্ত। এছাড়া পিএম২.৫, বেনজিন, ফরমালডিহাইড, এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডও পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
বর্তমানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস রান্নার জন্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক চুলার তুলনায় গ্যাসের চুলায় রান্নার সময় ৩ গুণ বেশি নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ বিলের কারণে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করা কঠিন।
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস স্বাদহীন, বর্ণহীন এবং অদৃশ্য, তাই এর উপস্থিতি নির্ণয় করা কঠিন। পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন:
১. গ্যাসের চুলার ব্যবহার সীমিত করুন।
২. রান্নাঘরে চিমনি বা এক্সহস্ট ফ্যান লাগান।
৩. প্রাকৃতিকভাবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন, যেমন রান্নাঘরে জানালা বা দরজা খোলা রাখা।
৪. হিটার বা ইলেকট্রনিক কুকারে রান্না করলে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা কমে।