গত মাসে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনা সরকারের গ্রহণ করা সাতটি মেগা প্রকল্প এখনো চলমান রয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বাকি ছয়টি প্রকল্পের ৯০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে এত বিশাল অঙ্কের ব্যয়ে এই প্রকল্পগুলো গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করছে মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতির ওপর প্রকাশিত হতে যাওয়া শ্বেতপত্রেও এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি বিশদ পর্যালোচনা থাকবে। এতে প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয়তা, গ্রহণের কারণ এবং ব্যয়ের যৌক্তিকতা খুঁজে দেখা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু এবং চার লেন সড়ক নির্মাণ। তবে অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। নতুন সরকার এখন প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, আর প্রাথমিকভাবে এই কাজ শুরু করেছে আইএমইডি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগের সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। যেমন, পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হলেও এর ব্যয়ের তুলনায় অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এছাড়া পায়রা বন্দর পরিচালনার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি ডলার (৬০০ কোটি টাকা) খরচ হবে।
পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আটটি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হয়েছে, যেখানে খরচ ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার কোটিতে দাঁড়ায়। পুরো ব্যয় জনগণের করের টাকা থেকে মেটানো হয়েছে। অন্যদিকে, মেট্রোরেলের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যার ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জাপানের জাইকা। এই ঋণ শোধ করতে ৪৫ বছর সময় লাগবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পগুলোতেও বিভিন্ন অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জের কথা জানা গেছে। বিশেষ করে রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ ২০২৭ সাল থেকে বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ শোধ করতে হবে।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই এই পর্যালোচনা শেষ হবে।