মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে কাওয়ালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় নারীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়ামত উল্লাহ (২২), হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর তামিম (২৩), দ্বাদশ শ্রেণির ইসতিয়ার আহম্মেদ (২০) ও শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা সাথী (২১)। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন শিক্ষার্থী মাথায় ও শরীরে আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা আপাতত শঙ্কামুক্ত।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শিল্পকলা একাডেমিতে কাওয়ালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ। এতে জুবায়ের আহম্মেদ নাফির নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক পক্ষ বাধা দেয়। একপর্যায়ে নিয়ামত উল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা শাবাব, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর একদল দুর্বৃত্ত হামলা করলে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। এতে চারজন চার শিক্ষার্থী আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে প্রশাসন। ঘটনার পর সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শিক্ষার্থী মিথিলা ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কাওয়ালি সংগীত হওয়ায় তাঁরা মাদারীপুরে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে কাওয়ালি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে অতর্কিতভাবে একটি পক্ষ হামলা চালিয়ে তাঁদের ভাইদের আহত করেন। তাঁরা এ ঘটনার বিচার চান।
এ বিষয়ে জোবায়ের হোসেন নাফির পক্ষের শিক্ষার্থী দিহান বলেন, ‘যারা কাওয়ালি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, তারা ভুয়া। এখনো যেখানে আমাদের ভাইদের রক্তের দাগ শুকায়নি, সেখানে তারা নাচ-গানের আসর বসিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
সদর মডেল থানার ওসি এ এইচ এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকায় প্রথমে তাঁদের বুঝিয়ে সমঝোতা করে দেন। পরে তাঁরা আবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ান। এখানে দুটি পক্ষ হয়ে যাওয়ায় বিরোধ তৈরি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।