ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত তিনটি পর্যায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়—সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি। এর মধ্যে রেডিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাপদ্ধতি যা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতে ক্যানসারের ধরন অনুযায়ী এই থেরাপি প্রদান করা হয়। যদিও সার্জারি ও কেমোথেরাপি কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায়, রেডিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত সেন্টারের প্রয়োজন হয়, যা সব বিভাগ বা জেলায় রয়েছে এমন নয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। সংস্থার মতে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি রেডিওথেরাপি সেন্টার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মতে, একটি সেন্টারে দুটি টেলিথেরাপি মেশিন এবং একটি ব্রাকিথেরাপি মেশিন থাকা উচিত। রেডিওথেরাপির এই মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮০টি সেন্টার থাকা উচিত, কিন্তু বর্তমানে আছে মাত্র ২৪টি, যার মধ্যে সরকারি সেন্টার ১২টি। তবে, এর মধ্যে চারটি সেন্টারে রেডিওথেরাপি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে।
এছাড়া, রেডিওথেরাপি ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং বেসরকারি সেন্টারগুলোতে এর খরচ সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি। অধিকাংশ ক্যানসার রোগী বেসরকারি সেন্টার বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না, ফলে সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সিরিয়াল ও মেশিনের স্বল্পতার কারণে ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
সরকার ক্যানসার চিকিৎসা আধুনিকীকরণ ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যানসার সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের কাজ করছে। নতুন সেন্টারগুলোতে আধুনিক রেডিওথেরাপি মেশিনসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ক্যানসার রোগীদের ভোগান্তি কমাতে সাহায্য করবে।
ডা. জুলেখা খাতুন
আবাসিক সার্জন, রেডিয়েশন অনকোলজি, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল