দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৮:৩০

পামির হাইওয়ে থেকে দেখা আফগান গ্রাম

ছেলেবেলার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পামির মালভূমির কথা শুনেছিলাম, তবে কখনো ভাবিনি যে সেই পথে হাঁটব। উজবেকিস্তান ভ্রমণের পর আমি তাজিকিস্তানে গিয়েছি। তাজিকিস্তানের ৯০ শতাংশ অঞ্চল পাহাড়ে ঘেরা, এবং এর ৪৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছে পামির অঞ্চল। গর্নো-বাদাখশান প্রদেশে অবস্থিত পামির অঞ্চল আমাদের প্রথম গন্তব্য কালাইখুম্ব। দুসানবে থেকে এটি ৩৮৫ কিলোমিটার দূরে।

 

গর্নো-বাদাখশান প্রদেশের প্রথম জেলা দারভোজ পামির হাইওয়ের প্রবেশদ্বার। কালাইখুম্ব শহর দারভোজের কেন্দ্রবিন্দু। আজ রাত আমরা কালাইখুম্ব শহরে থাকব। পথের দুই পাশের সুউচ্চ পর্বতমালা দেখে আমি বারবার হুসেনকে জিজ্ঞেস করছিলাম, “আমরা কি পামির হাইওয়েতে প্রবেশ করেছি?” হুসেন হাসতে হাসতে বললেন না। দুসানবে থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে এল পামির অঞ্চল।

 

আমার পাসপোর্ট নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গেলে কিছু প্রশ্নের পরে আমাদের স্বাগত জানানো হয়। তবে হুসেন সতর্ক করে দিলেন, পথের মধ্যে আর্মিদের দিকে ক্যামেরা তাক না করতে। পর্যটকদের দাঁড়ানোর অনুমতি নেই, তাই জানালার কাচ দিয়ে শুধু পাহাড়ি পথ উপভোগ করতে হয়।

 

যেতে যেতে হুসেন গাড়ি থামাল একটি নীল বোর্ডের কাছে। হাতের ডান দিকে আফগানিস্তান! মাঝখানে পাঞ্জদরিয়া নদী। সেখানে আফগান পাহাড় দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পাঞ্জদরিয়া সাঁতরে ওপাশে চলে যাই।

 

বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে দূরে একটি ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। হুসেন পরিচয় করিয়ে দিলেন, এটি তাজিক-আফগান ব্রিজ। পামির হাইওয়েতে পাঁচটি এমন সেতু আছে। প্রতি শনিবার এখানে বাজার বসে, এবং সহজেই আফগান ভূখণ্ডে পা রাখা যায়। বাজার দেখতে ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সময় হয়নি। পাঞ্জদরিয়ার এপাশে তাজিক বাদাখশান, ওপাশে আফগান বাদাখশান। উনিশ শতকের আগে পুরোটাই বাদাখশান প্রদেশ এবং পামির হাইওয়ে ছিল। প্রতিটি ব্রিজের পাশে মিলিটারি ক্যাম্প দেখা যায়।

 

তাজিকিস্তান সড়ক দিয়ে চলতে চলতে আফগান সড়ক, গ্রাম ও ফসলের খেত দেখা যায়। ধীরে ধীরে গর্নো-বাদাখশান এলাকায় প্রবেশ করা শুরু হলো। গাইড হুসেন বললেন, অল্প সময় লাগবে পৌঁছাতে। কালাইখুম্ব বা কালাইখুম নামে জায়গায় রাত যাপন করা হবে, যা সমুদ্রতল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে। আফগান সড়ক, পাঞ্জদরিয়া নদী এবং তাজিক সড়ক যেন আমার সাথে চলেছে।

 

শেষ বিকেলে আমরা কালাইখুম্ব শহরে পৌঁছালাম। ছোট্ট পাহাড়ি শহরটি পাঞ্জদরিয়ার একটি শাখার ধারে অবস্থিত। রাত তিনটা, পুরো শহর নিস্তব্ধ। আমি আর হুসেন জেগে আছি। পরবর্তী পথ গরমচশমা পর্যন্ত, রাতের অন্ধকারে পথ চলা কঠিন। জিপের সিটে বসাও যাচ্ছে না।

 

হুসেন বললেন, এ রকম পথ বেশ খানিকটা রয়েছে। রাত সাড়ে তিনটা; সকাল আটটা পর্যন্ত চলতে হবে। ভোররাতে রওনা হওয়ার কারণ হলো, পামির হাইওয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। তাই ভোরে বের হওয়া। আজকের গন্তব্য প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। পথ সংস্কার হলে পামিরের ডেডলি হাইওয়ে উপভোগ্য থাকবে না।

 

গাড়ি চলছেই। আমি আফগান পথের দিকে আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে আছি। মাঝে গমের খেত, পাথরের বাড়ি, ধূসর পাহাড়ের মধ্যে একটুকরো সবুজ দেখা যায়। হুসেন জিপ থামিয়ে একটি আফগান স্কুল দেখালেন। আফগান গ্রামগুলো দেখতে দেখতে চোখে পড়ল একটি সাদা পতাকা। হুসেন বললেন, এটি তালেবান পতাকা।

 

পামিরের পথে রাত কাটিয়েছি কালাইখুম্ব এবং গরমচশমা শহরে। যাত্রাপথে কালোট, খড়্গ, ভারাম এবং ইসকাশিম শহরগুলো ঘুরেছি। তাজিক এবং আফগান পামির অঞ্চল উভয়ই উপভোগ করেছি, কিন্তু চোখ আর ক্যামেরা বেশিরভাগ সময় আফগান গ্রামগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে মনে বলছিলাম, ‘এলিজা, তুমি তাজিক পামির উপভোগ করতে এসেছ।’

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট