তসলিমা ফেরদৌসের বয়স ৬৩ বছর। এই বয়সে তিনি হয়ে উঠেছেন অসহায় শিশু ও প্রবীণদের আশ্রয়স্থল এবং একজন সফল উদ্যোক্তা। সিয়াম সাহারিয়া তাঁর জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন।
ছোটবেলায়, তসলিমা তার বাড়ির পাশের একটি দেড় বছরের শিশুকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন। এ অভিজ্ঞতা তার জীবনভর মানুষের পাশে থাকার প্রেরণা জুগিয়েছে। আজ তিনি ৬৩ বছর বয়সে অনেকের কাছে ‘মা’ ও ‘আন্টি’ হিসেবে পরিচিত।
**ব্যক্তিগত জীবন:**
তসলিমার বাবা মহসীনউল ইসলাম এবং মা কবিরা খাতুন ছিলেন। বাবা মারা গেছেন। তাঁর এক বোন শামীমা ফেরদৌস এবং এক ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ছেলে মাহফুজুল আলম ফিনল্যান্ডে থাকেন, এবং মেয়ে মাসকুরা আশরাফি বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বাস করছেন। তসলিমা নওগাঁ পিএম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নওগাঁ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বগুড়ার সান্তাহার কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এসএসসি পরীক্ষার আগে তার বিয়ে হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলমের সঙ্গে।
**শহর থেকে শহরে:**
স্বামীর পেশার কারণে শহর থেকে শহরে বাস করার অভ্যাস ছিল। ১৯৮১ সালে নওগাঁ ছেড়ে রাজশাহীতে চলে আসেন, সেখানে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন এবং স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দেন। শিশু শিক্ষালয় নামে একটি স্কুলও গড়ে তোলেন। পরে, মো. মাহবুব আলমের বদলির কারণে বগুড়ায় চলে যান এবং সেখানে প্রায় ২৫০ জন নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেন।
**নতুন অধ্যায়:**
সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চলে আসেন এবং মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকে চাকরি নেন। ২০০৪ সালে মিরপুরে নিজ বাসায় প্রবীণ নিবাস ‘বেলা শেষে’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে সন্তানেরা বিদেশে চলে গেলে, তিনি নওগাঁতে ফিরে যান এবং ‘বেলা শেষে’ এর জন্য নতুন আশ্রয়স্থল তৈরি করেন।
**নওগাঁয় বেলা শেষে:**
নওগাঁয় কাজীপাড়ায় একটি স্থায়ী ঠিকানা করে সেখানে অসুস্থ, মানসিকভাবে অস্থির এবং প্রবীণ নারীদের আশ্রয় দেন। শুরুতে স্থানীয়দের বিরক্তির সম্মুখীন হলেও তসলিমা স্থিতিশীল থাকেন। তার উদ্যোগে, ‘বেলা শেষে’ ৮০০ জনেরও বেশি প্রবীণ এবং শিশু সেবা পেয়েছে।
**আড্ডায় কফি:**
প্রবীণ নিবাস এবং অন্যান্য ব্যয়ের জন্য তসলিমা নওগাঁ শহরে ‘আড্ডায় কফি’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন যেখানে ১২ জন কর্মী কাজ করেন।
**সচেতনতা ও সম্মাননা:**
নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়ানো ছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ‘রাঁধুনি কীর্তিমতী হিতৈষী-২০১৮’ এবং নওগাঁর একুশে পরিষদের বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন।
বর্তমানে তসলিমার কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেই; তিনি তাঁর কাজ অব্যাহত রাখতে চান। সবাই তাঁকে ‘মা’ ডাকে এবং এ সন্মানই তার সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন। বিকেলের আলোয় তসলিমা ফেরদৌস আমাদের বিদায় জানান।