একটার ওপর একটা বই থরে থরে সাজিয়ে গড়া হয়েছে প্রবেশদ্বারের পিলার। এর নিচ দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটি শহীদ মিনার, যা মনে হবে বইয়ের পাতা খুলে রাখা হয়েছে। পাশেই রয়েছে বই ও কলম দিয়ে তৈরি হৃদয় পুস্তক চত্বর এবং দেয়াল জুড়ে রয়েছে বইয়ের প্রচ্ছদ, যেন এটি এক বিশাল বইয়ের জগৎ।
এটি কোনো থিম পার্ক নয়, বরং লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজের ক্যাম্পাস। কলেজটি হাতীবান্ধা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গোতামারী ইউনিয়নের কাকিনা বাইপাস সড়কের পাশে অবস্থিত। এখানে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের চিরায়ত ৫০টি বইয়ের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। এই প্রবেশদ্বারটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, এবং এখন এটি এক দর্শনীয় স্থান।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন ‘হাতের মুঠোয় পৃথিবী’ ধারণা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেন। শহীদ মিনারের নকশায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ যোগ করে একটি বইয়ের খোলা পাতা চিত্রিত করেন, যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ প্রকাশ করে। ২০১৯ সালে প্রবেশদ্বারের পিলার তৈরি শুরু হয়, যার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। নকশার জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ২৫টি চিরায়ত বইয়ের আদল ব্যবহার করা হয়।
প্রবেশদ্বারের দুই পিলারে থরে থরে সাজানো বইয়ের নকশায় স্থান পেয়েছে আনিসুল হকের ‘মা’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’, মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ এবং অমৃত সেনের ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যাজ ফ্রিডম’।
দইখাওয়া আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন যে কলেজটি ১৯৯৯ সালে ৩ একর ১০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কলেজটির উন্নয়নমূলক কাজের জন্য স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রশংসা করেছেন এবং কলেজের তোরণ দেখতে অনেক মানুষ আসেন। কলেজের পাশের দেয়ালেও স্থানীয় গুণী ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে, যা ভীষণভাবে আকর্ষণীয়।
কলেজে প্রায় ১,৩০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, এবং এখানে বাংলা বিষয়ে অনার্স পাস কোর্স চালু রয়েছে। অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের জন্য ১০ টাকার ব্যবস্থা করেছেন, এবং কলেজের ছাদে একটি ছাদবাগান ও মৌসুমি শাকসবজির চাষাবাদ করা হচ্ছে।