দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৬:৪৪

বেরোবি শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিবর্তন চান না

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে এর নামকরণ করে “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর” রাখা হয়। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভেঙে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানকে দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তুলতে দেখা গেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত পাঁচজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু কেউই সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারেননি। সদ্য বিদায়ী উপাচার্য কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। এর আগের চারজন উপাচার্য অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আন্দোলনের মুখে বিদায় নেন। ফলে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান না।

 

কিছু শিক্ষার্থীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে নিয়োগ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষক আওয়ামী লীগপন্থী। তারা একাধিক সংগঠনও গড়ে তুলেছে, যেমন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ প্রভৃতি। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রমজান আলী বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল না। আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় যদি কোনো শিক্ষক সেখানে থাকতেন, তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না।”

 

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন, কিন্তু এখানে যারা নিরপেক্ষ তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা নেই বা ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। অন্যদিকে, যাদের এই যোগ্যতা আছে তারা অনেকেই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে যোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ একজন ভিসি চান।”

 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, “আমরা চাই এমন একজন ভিসি যিনি শিক্ষিত, বাস্তববাদী এবং আদর্শ মানুষ হবেন, যিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

 

ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর গাজী বলেন, “ভিসি হবে মুক্ত চিন্তার, কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষকের অভাব রয়েছে। মুক্ত চিন্তার যোগ্য একজন ব্যক্তিকে ভিসি হিসাবে দেখতে চাই।”

 

এ বিষয়ে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই আবেগকে আমি সমর্থন করি, কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আপন করতে পারেনি। তবে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো শিক্ষক ভিসি হন, তাহলে তার দায়বদ্ধতা অনেক বেশি থাকবে।”

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট