দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৮:০৫

জেনিন থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহর থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করছে ইসরাইলি বাহিনী, যা শহরের জীবনযাত্রাকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তুলছে। টানা দিনের অভিযানে পশ্চিম তীরে ৩৬ জন নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইসরাইলি বাহিনী সেনা প্রত্যাহার শুরু করার পর থেকে শহরের পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

ইসরাইলি বাহিনী সম্প্রতি জেনিনে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করায় শহরটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। নেতানিয়াহুর বাহিনী শহরটিকে ঘিরে রাখায় স্থানীয় জনগণের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয় এবং একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

গত ২৮ আগস্ট থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিনসহ বেশ কিছু শহর ও গ্রামে সামরিক অভিযান শুরু করে। কয়েকদিনের ধ্বংসাত্মক অভিযানে সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার ব্যবহৃত হয়। জেনিন বাস্তু শিবির থেকে পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা এখন পুনরায় তাদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই শহরে দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে আসছে। শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা জেনিনে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যদিও সরাসরি সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অভিযানে ইসরাইলি বাহিনী ১৪ জন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং ৩০ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। এছাড়া তারা রাস্তা থেকে প্রায় ৩০টি বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলেছে এবং চারটি বিমান হামলা পরিচালনা করেছে।

এদিকে, সংঘর্ষের মধ্যে একজন ইসরাইলি সেনার মৃত্যু হয়েছে এবং হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দাবি করেছে যে নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৪ জন যোদ্ধা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী সাত সন্তানের বাবা আজিজ তালেব ও তার পরিবার বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পান যে, ইসরাইলি সেনারা তাদের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, “আল্লাহকে ধন্যবাদ যে, বাচ্চারা আগের দিন এখানে ছিল না। তারা পাশের বাড়িতে ছিল, অন্যথায় সেনারা সতর্কতা ছাড়াই তাদের মেরে ফেলতে পারতো।”

জেনিন শিবিরে অনেক বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং রাস্তাগুলোর পিচ তুলে ফেলা হয়েছে। শুক্রবার ইসরাইলি সাঁজোয়া যান প্রত্যাহারের পর স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরাতে শুরু করেছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা বা বসতকারীরা ৬৬১ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে। একই সময়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি হামলায় ২৩ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইসরাইলি বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তল্লাশি করেছে এবং কয়েকশ ফিলিস্তিনীকে আটক করেছে। অভিযানের সময় শহরের রাস্তাগুলো প্রায় জনশূন্য ছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল।

এখন, সেনা প্রত্যাহারের পর শহরের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন কাজে ফিরে আসছে, দোকানপাট পুনরায় খুলে গেছে এবং রাস্তায় মানুষের চলাফেরা বাড়ছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহরগুলোতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভিযান নতুন নয়। তারা প্রায়ই নিরাপত্তা অভিযান চালানোর অজুহাতে তল্লাশি ও আটক কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরনের অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, ভবিষ্যতে আবারও এমন অভিযানের আশঙ্কা করছেন তারা।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট