বাংলাদেশের সাবেক দ্রুততম মানবী তিনি। ২১ বছর ধরে নারী লং জাম্পে দেশের রেকর্ডধারী। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস লং জাম্পে দুটি রুপা জিতেছেন। সম্প্রতি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে সাভার বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিকস কোচ হিসেবে কাজ করছেন। সারা জীবন অ্যাথলেটিকস নিয়েই ছিলেন ব্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ করে ফৌজিয়া হুদা জুঁইয়ের নামের পাশে আরেকটি পরিচয় যোগ হচ্ছে। তাঁকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের স্ট্রেনথ ও কন্ডিশনিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। আপাতত তাঁর সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছয় মাসের জন্য।
নতুন ভূমিকায় এখনো কাজ শুরু করেননি জুঁই। বিকেএসপি থেকে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। আজ দুপরে ফোনে যোগাযোগ করলে বিকেএসপি থেকে সাবেক অলিম্পিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিবি থেকে বিকেএসপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন বিকেএসপি অনুমতি দিলে নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করব। আজই হয়তো জানতে পারব বিকেএসপির সিদ্ধান্ত।’
অ্যাথলেটিকস থেকে এখন ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করবেন, কখনো কী ভেবেছেন এমন কিছু? জুঁই বলেন, ‘আসলে এটা ফাহিম স্যারের (বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম) অবদান। তিনি চেয়েছেন বলে হয়েছে। ফাহিম স্যার অনেক দিন ধরে এ নিয়ে ভাবছিলেন। এখন সুযোগ এসেছে।’
স্ট্রেনথ ওন্ড কন্ডিশনিং যেহেতু, ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়েই মূলত কাজ। বিস্তারিত শোনা যাক তাঁর মুখে, ‘আমাদের খেলাটাই (অ্যাথলেটিকস) স্ট্রেনথ অ্যান্ড কন্ডিশনিংভিত্তিক। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটা করেছি। ক্রিকেটে হয়তো অতটা নয়। এর ওপর একটা কোর্সও করা হয়েছে আমার। নতুন দায়িত্বে নারী ক্রিকেটের ফিটনেস নিয়ে কাজ করা হবে। কাজটা করতে আমি উন্মুখ হয়ে আছি।’
নতুন দায়িত্ব পাওয়ার কথা জেনে জুঁই যেমন রোমাঞ্চিত, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জটাও ভুলে যাচ্ছেন না, ‘এত দিন পর নিজেকে অন্য জায়গায় মেলে ধরতে চাই। নিজেকে চেনাতে চাই। এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জও। তবে চ্যালেঞ্জের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত বলতে পারেন। এর সঙ্গে অবশ্য নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।’
ছোট থেকেই খেলাধুলায় মগ্ন কুড়িগ্রামের মেয়ে দেশের নারী খেলার অনেক চড়াই–উতরাই দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতায় বলছেন, ‘আমাদের দেশে এখন ক্রীড়া পরিবেশ গড়ে উঠছে। আগে এ রকম ছিল না। আমি চাই, মেয়েরা এগিয়ে আসুক, ভালো জায়গায় যাক। মেয়েরা যাতে ভালো কিছু করতে পারে, তার জন্য কাজ করব।’
বাংলাদেশের নারী অ্যাথলেটদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি সফল জুঁই। ২০০৪ ও ২০০৬ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে লং জাম্পে রুপা জিতেছেন। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়া ১১তম এশিয়ান জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে (অনূর্ধ্ব–২১) লং জাম্পে জেতেন ব্রোঞ্জ। এই অর্জন বাংলাদেশের আর কারও নেই।
তেহরানে তৃতীয় ইসলামিক গেমসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে জেতেন ব্রোঞ্জ। করাচিতে ৭ দেশের আমন্ত্রণমূলক অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জেতেন সোনা। দেশের দ্রুততম মানবী হয়েছেন দুবার—২০০০ সালে প্রথম, ২০০২ সালে বাংলাদেশ গেমসে দ্বিতীয়বার। ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসে লং জাম্পে তাঁর সোনার সংখ্যা ১৩-১৪টি।
ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে কোচিংয়ের ওপর পিএইচডি করেছেন। চাইলে এখন নামের পাশে ডক্টর লিখতে পারেন। তবে জুঁই চান বিকেএসপির অনুমতি নিয়ে লিখতে, যেহেতু বিকেএসপির অনুমতি নিয়েই পিএইচডি করেছেন। ২০০৬ সালে পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।