শর্টসার্কিট কী
যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র বর্তনী বা সার্কিটের মাধ্যমে চলে। বর্তনী হলো পথ। অন্য যেকোনো কিছুর মতো বিদ্যুৎও চলাচলের সহজ পথ খোঁজে। বিদ্যুৎপ্রবাহের জন্য যখন একটা নতুন পথ তৈরি হয়, যেখানে রোধ (বাঁধা) আগের বর্তনীর চেয়ে কম, তখন বিদ্যুৎ সেই পথে চলাচল করে। শর্টকাট পথে বাধাহীন চলাচলের ফলে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। ইলেকট্রনের দ্রুতগতির ফলে উৎপন্ন হয় তাপ। সেই তাপ বের হওয়ার জন্য বিস্ফোরিত হয়। তাতেই ধরে আগুন। অভ্যন্তরীণ ত্রুটি, নড়বড়ে সংযোগ বা ত্রুটিযুক্ত অ্যাপ্লায়েন্সের কারণে শর্টসার্কিট হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
১. টু–প্রং (সোজা ভাষায় দুটি ছিদ্রযুক্ত) আউটলেটের জায়গায় থ্রি–প্রং আউটলেট (তিনটি ছিদ্রযুক্ত) ব্যবহার করুন। থ্রি–প্রং আউটলেট উচ্চ ভোল্টেজ জল্ট বা ঝাঁকুনি প্রতিরোধে সহায়ক।
২. যেকোনো বিদ্যুৎ–সংযোগে উন্নত মানের কেব্ল ও ভালো কোম্পানির সার্টিফায়েড তার ব্যবহার করুন। লাইসেন্সধারী বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিকে দিয়ে কাজ করান। যেকোনো বিদ্যুৎ–সংযোগের কাজ করার আগে বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করুন।
৩. শর্টসার্কিট প্রতিরোধে অবশ্যই জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বাড়ি তৈরি করতে হবে। বাড়ির দেয়ালের ভেতরের বা বাইরের যে অংশ দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করতে চান, সেটি অবশ্যই জাতীয় বিল্ডিং কোডের মাপ অনুযায়ী হতে হবে।
৪. মাল্টিপ্লাগ ব্যবহারে সাবধান থাকতে হবে। অনেকে একটি ইলেকট্রিক্যাল আউটলেটে একাধিক মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করেন। তখন ওভারলোডের ফলে অনেক সময় শর্টসার্কিটের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৫. অনেক সময় অতিরিক্ত তাপের কারণে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পানির কারণেও শর্টসার্কিট হতে পারে। তাই অবশ্যই রান্নাঘর, ফ্লোর, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি থেকে ইলেকট্রিক লাইনগুলো দূরে রাখতে হবে। এমনভাবে বোর্ড অথবা অন্যান্য কানেকশন ব্যবহার করতে হবে, যেন কোনোভাবেই বৈদ্যুতিক লাইন তাপ অথবা পানির সংস্পর্শে না আসে।
৬. শর্টসার্কিট প্রতিরোধের জন্য বছরে অন্তত একবার ইলেকট্রিক্যাল লাইনগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে শক্তিশালী অ্যাপ্লায়েন্সগুলো, যেখানে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাগে, যেমন এসি, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক ওভেনের সংযোগগুলো পরীক্ষা করুন। কোনো ত্রুটি বা ঝুঁকি থাকলে তা সমাধান করুন। অনেক সময় শর্টসার্কিটে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আগে ভেতরে তার পুড়ে যাওয়ার পোড়া গন্ধ আসে। তখনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেটি চেক করে ঠিক করে নিতে হবে।
৭. আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে শুধু বৈদ্যুতিক বাতির মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র ব্যবহার করুন। টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো হাই-ভোল্টেজের বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো বন্ধ রাখুন।
৮. বাড়িতে অবশ্যই ফিউজ বক্স বা সার্কিট বক্স রাখুন। প্রায় সব বাড়িতেই এখন সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ ইনস্টল থাকে। ফিউজ বক্সে থাকে প্রতিস্থাপনযোগ্য ফিউজ। হুট করে ইলেকট্রিসিটির প্রবাহ বেড়ে গেলে ওই প্রতিস্থাপনযোগ্য ফিউজটি গলে যায়। তুলনামূলক পুরোনো বাড়িতে ফিউজ বক্স থাকে। অন্যদিকে সার্কিট ব্রেকার বক্সে একটি সুইচ থাকে, যেটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ইলেকট্রিসিটি প্রবাহিত হলে একা একাই বিভিন্ন সার্কিটের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর আপনি সুইচটি অন করে দিলে আবার সার্কিটগুলো সংযোগ পাবে। তুলনামূলক আধুনিক বাড়িতে এই ব্যবস্থা থাকে।
সূত্র: উইকিহাউ