দ্যা নিউ ভিশন

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১১:০৬

দুবাইয়ে স্পিন-পেস নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ‘উত্তেজনা’

দুবাইয়ের এ মাঠেই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এবার স্বাগতিক দল দুটি বললে কি খুব বেশি ভুল বলা হবে? এক স্বাগতিক দল তো পাকিস্তানই। সংযুক্ত আরব আমিরাতে টুর্নামেন্টের একটা অংশ হলেও অন্য স্বাগতিক কিন্তু আমিরাত দল নয়, অন্য ‘স্বাগতিক’ রোহিত শর্মার ভারত।

ভারতকে রূপক অর্থে স্বাগতিক বলার কারণটা সবারই বুঝতে পারার কথা। রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় দল পাকিস্তানে টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচ খেলবে না। গ্রুপের সব ম্যাচ তো বটেই, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠলে সেই ম্যাচগুলোও খেলবে নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে। অন্য দলগুলোকে পাকিস্তান–দুবাই–পাকিস্তান করে টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। বাংলাদেশ দল যেমন আজ দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে গ্রুপের পরের দুই ম্যাচ খেলতে আগামীকাল চলে যাবে পাকিস্তানে।

দুবাইকে নিরপেক্ষ না বলে ‘তথাকথিত নিরপেক্ষ’ ভেন্যু বলাই ভালো। নিরপেক্ষ কোথায়, এটি এক অর্থে তো ভারতেরই ভেন্যু!

পাকিস্তানে পাকিস্তানের যেকোনো ম্যাচে পাকিস্তানের সমর্থন বেশি থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তানে খেললে অন্য ম্যাচগুলোতেও ভারতীয় দল যে পরিমাণ সমর্থন পেত; দুবাইয়ে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি তো বটেই, অনেকটা দেশের মতোই সমর্থন পাবে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশের সমর্থনও কম থাকার কথা নয়। তবে ভারতের তুলনায় সেটি নগণ্যই হবে হয়তো।

বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচের প্রিভিউ লেখার সময় আবারও মনে হলো, ভারত আসলেই এই টুর্নামেন্টের আরেক স্বাগতিক। পরদিন যেখানে খেলা, সেই দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে অনুশীলন করছে ভারতীয় দল। ড্রেসিংরুমের সামনের জায়গাটায় সাদা প্লাস্টিকের চেয়ার সারি করে রাখা। দুই পাশে দুই দল ভাগ হয়ে তার ওপর দিয়ে বল মেরে খেলছে গা–গরমের পায়ের ‘ভলিবল’।

দুপুরে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে মূল স্টেডিয়াম থেকে দুই কিলোমিটার দূরের আইসিসি একাডেমি মাঠে। তবে ম্যাচের আগের দিন মূল মাঠে অনুশীলন না করা নিয়ে অভিযোগের কিছু নেই। বাংলাদেশ দল কালও পুরোদমে নেট অনুশীলন করেছে। ভারতীয় স্পিনারদের কথা মাথায় রেখে ব্যাটিং অনুশীলনে স্পিন খেলার ওপর জোরও দিয়েছে। যেটা মূল স্টেডিয়ামে করার সুযোগ ছিল না। দুবাইয়ের এই মাঠে নেট অনুশীলনের সুবিধাই নেই।

ভারতও সেটা করেনি। তবে ম্যাচের আগের দিন দাঁড়িয়ে থেকে হলেও মাঠের আবহ গায়ে মাখার একটা সুবিধা তো থাকেই। ভারতের বোলাররা মাঝ–উইকেটে বোলিং করলেন, ক্যাচিং প্র্যাকটিসও হলো মূল মাঠে। সব মিলিয়ে ঘরের মাঠে খেলা হলে স্বাগতিকেরা যা যা সুবিধা নিয়ে থাকে, সবই নিয়েছে ভারত।

এখন বাকি শুধু দুবাইয়ের উইকেটের ভারতীয় ভাষাটা বোঝা। রোহিতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে পাঁচ স্পিনার কেন—এ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনা। যদিও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, উইকেটের সম্ভাব্য চরিত্র অনুমান করেই বোলিং আক্রমণে স্পিনার বাছাইয়ের সুযোগ বেশি রেখেছে ভারত। পাকিস্তানের উইকেটে ব্যাটিং যতটা সহজ হবে, দুবাইয়ে ততটা হওয়ার কথা নয়। ভ্রমণঝক্কির বাইরে থাকা ভারতের সব ম্যাচই যেহেতু দুবাইয়ে, তাদের স্পিনাররা সেই কাজ আরও কঠিন করে তুলতে পারেন ব্যাটসম্যানদের জন্য।

তবে কাল রোহিত শর্মার সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ স্পিনার প্রসঙ্গ উঠলে ভারত অধিনায়ক সচকিত হয়ে শুধরে দিতে চাইলেন, ‘পাঁচ স্পিনার কোথায় দেখলেন? স্পিনার তো দুজন! বাকি যাঁদের স্পিনার বলছেন, তাঁরা অলরাউন্ডার।’ দলে থাকা পাঁচ স্পিনারের মধ্যে রোহিতের দৃষ্টিতে বিশেষজ্ঞ স্পিনার শুধু কুলদীপ যাদব আর বরুণ চক্রবর্তী। রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, এমনকি ওয়াশিংটন সুন্দরকেও বলছেন অলরাউন্ডার। রোহিতের দাবি শুনে হাসি শোনা গেল সংবাদ সম্মেলনকক্ষে।

তা যে যে পরিচয়েই খেলুন না কেন, ভারতের বিপক্ষে আজ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তিনজন স্পিনার সামলাতে হতে পারে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ধারণা। এমনকি এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ওয়ানডে খেলা ‘রহস্য স্পিনার’ বরুণও সেই ত্রয়ীর একজন হয়ে উঠতে পারেন। কোচ গৌতম গম্ভীরের খেয়াল নাকি সেদিকেই। রোহিত অবশ্য লেগ স্পিনার বরুণকে ‘রহস্য স্পিনার’ পরিচয় দিতে মৃদু আপত্তি প্রকাশ করলেন, তবে তা রসিকতা মিশিয়ে, ‘নেটে তো আমাকে সব সময় ও সোজা সোজা বলই করে, বাড়তি কিছু করে না। কে জানে, হয়তো আমাকেও নিজের বোলিংটা পুরোপুরি দেখাতে চায় না।’

ভারতীয় দল নিয়ে আলোচনায় স্পিনাররা প্রাধান্য পেলেও বাংলাদেশ নিয়ে সব আলোচনার কেন্দ্রে নাহিদ রানা। আইসিসির কোনো ইভেন্টে এই প্রথম খেলবেন পেসার নাহিদ এবং আজ খেললে প্রথম ম্যাচই খেলবেন ভারতের বিপক্ষে। কাল ভারতের সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কৌতূহলটা এই পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে রানা অনুশীলন করলেন কি না, করলে বোলিংটা পুরোদমে করলেন তো—এ নিয়ে তাদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের।

ম্যাচের আগের দিনের আলোচনায় ব্যাটিংটা কম থাকলেও হাল আমলের ওয়ানডে ক্রিকেট মূলত ব্যাটিং–নির্ভর। জিততে হলে বড় রান করতে হবে, বড় রান তাড়া করা জানতে হবে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হাসানের বিশ্বাস, দুটির সামর্থ্যই তাঁদের আছে। বাকি থাকল সেটি করে দেখানো। দুবাইয়ে প্রতিপক্ষ ‘স্বাগতিক’ ভারত বলে প্রথম ম্যাচে সেই চ্যালেঞ্জটা একটু কঠিনই হবে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ