অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ার পর এস আলম গ্রুপের ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এই গ্রুপের ঋণ ব্যবস্থাপনায় নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা ধরা পড়েছে। সরকারী পর্যায়ের প্রভাবের কারণে এস আলম গ্রুপ ব্যাংক দখল করে বেপরোয়া গতিতে ঋণ নিয়েছে, যার আইনগত তদারকি ছিল প্রায় nonexistent। বর্তমানে দুইটি ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোনো বেআইনি সুবিধা না দেওয়া হলে চলতি সেপ্টেম্বর অথবা ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ঋণ পুরোপুরি খেলাপি হয়ে যাবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রুপটির ঋণ ছিল ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। সরকারের পতনের পর এই ঋণের নবায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে পরিদর্শক দল নানা অবিশ্বাস্য তথ্য পেয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, গ্রাহকের নামে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, অথচ সেই গ্রাহকের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং ঋণ পরিশোধও করা হয়নি।
এছাড়া, এলসি খুলে ব্যাংক থেকে ৯০-৯৫ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পণ্য বিক্রি করে ব্যাংকে নগদ টাকা জমা দেওয়া হয়নি। এর ফলে, ব্যাংক এলসির টাকা ফোর্সলোন তৈরি করে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে।
ইসলামী ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংকে বর্তমানে যথাক্রমে ১৫ হাজার কোটি টাকা ও ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঋণের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ব্যাংক বিদেশি ব্যাংককে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়, কিন্তু এস আলম গ্রুপ কোনো ঋণ পরিশোধ করেনি।
২০১৭ সাল থেকে এস আলম গ্রুপ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ করে, কিন্তু সেগুলোর সুদসহ মোট ঋণ পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়ে গেছে। ঋণের মেয়াদ ও সীমা বৃদ্ধি করে খেলাপিমুক্ত রাখা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে নতুন গভর্নরের পদত্যাগের পর এসব ঋণের নবায়ন বন্ধ হয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের নাফ ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়েছে এবং এই অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।