রান বিচারে হয়তো কিছু না, কিন্তু সামর্থ্য বিচারে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যই। ওয়ানডেতে কেইন উইলিয়ামসন সর্বশেষ এক অঙ্কের রানে আউট হয়েছেন ছয় বছর আগে, অর্থাৎ ক্রিজে আসার পর তাঁর টিকে থাকার সামর্থ্যটা পরিষ্কার।
লাহোরে আজ ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে পরীক্ষায়ই অবতীর্ণ হয়েছিলেন উইলিয়ামসন। প্রোটিয়াদের ৩০৪ রান তাড়া করতে নেমে ক্রিজে যখন এলেন, ৯.৫ ওভারে কিউইদের স্কোর ১ উইকেটে ৫০। টিকে থাকার পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার চাপও ছিল। উইলিয়ামসন দুটোই করেছেন দারুণভাবে—২০১৯ সালের জুনের পর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন ৭২ বলে, এরপর মাঠ ছেড়েছেন ম্যাচ জিতিয়ে।
এ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও উঠল নিউজিল্যান্ড। ২ ম্যাচের দুটোই জিতে মোট ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মিচেল স্যান্টনারের দল। একটি করে ম্যাচ খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান এখনো পয়েন্ট পায়নি। জয়ের মুখ না দেখলেও রান রেটে এগিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনে পাকিস্তান। বুধবার করাচিতে পাকিস্তান–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে জয়ী দল ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে। শুক্রবার করাচিতে ফাইনাল।
নিউজিল্যান্ডের ৮ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয়ে ‘নিউক্লিয়াস’ উইলিয়ামসনের ১১৩ বলে ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৯ বলের পর উইলিয়ামসনের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।
ওয়ানডেতে ১৪তম, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৪৭তম—এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সকেও ছুঁয়ে ফেললেন কিউই কিংবদন্তি। কী দারুণ ব্যাটিংটাই না করলেন!
উইল ইয়াং ১৯ রানে ফিরে যাওয়ায় দলীয় ৫০ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়ের সঙ্গে ১৫৫ বলে ১৮৭ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডের।
১০৭ বলে ৯৭ রান করা কনওয়ে ৩৫.৩ ওভারে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর ড্যারিল মিচেল ও টম ল্যাথাম উইলিয়ামসনকে ক্রিজে সঙ্গ দিতে পারেননি। মাঝে তিন ওভার পর টানা দুই বলে মিচেল ও ল্যাথামকে তুলে নেন প্রোটিয়া স্পিনার সেনুরান মুথুস্বামী। নিউজিল্যান্ডের তখন ৬৯ বলে দরকার ৫৪ রান, হাতে ৬ উইকেট। সহজ লক্ষ্য, কিন্তু দ্রুত উইকেট পড়লে বিপদও হতে পারত। উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিলিপস মিলে তা হতে দেননি।
পঞ্চম উইকেটে ৬২ বলে ৫৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় তুলে নেন দুজন। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরে জয় নিশ্চিত করাটা যেন উইলিয়ামসনের এই ‘মাস্টারক্লাস’ ইনিংসে প্রাপ্য ছিল। ওই চারেই ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়ে যান উইলিয়ামসন। ২ ছক্কা ও ১৩ চারে ইনিংসটি সাজান উইলিয়ামসন। দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে রান উঠেছে মোট ৬১২। ওয়ানডেতে এই দুই দলের ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ মোট রান।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস এগিয়েছে তাদের অভিষিক্ত ওপেনার ম্যাথু ব্রিটকজের ১৫০ রানের ইনিংসে। ওয়ানডে অভিষেকে এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। উইয়ান মুল্ডার খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস। তিনে নামা জেসন স্মিথের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩০৪/৬ (ব্রিটকজে ১৫০, মুল্ডার ৬৪, স্মিথ ৪১; হেনরি ২/৫৯, ও’রুর্কি ২/৭২, ব্রেসওয়েল ১/৪৩)।
নিউজিল্যান্ড: ৪৮.৪ ওভারে ৩০৮/৪ ( উইলিয়ামসন ১৩৩*, কনওয়ে ৯৭, ফিলিপস ২৮*; মুথুসামী ২/৫০, ইথান ১/৩৩, ডালা ১/৪৭)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: কেইন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)।