ইচ্ছা করলে সাঁতারু হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। ছাত্রজীবনে বহুবার সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, দেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের বাইরে সাঁতার প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কী হলো? সাঁতার ছেড়ে সিনেমায় যোগ দিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন। অভিনয়ে পেশাগত কাজে ভালো–মন্দ থেকে চোখধাঁধানো সাফল্য, বিতর্ক, আইনি জটিলতা, সম্পর্কের গুঞ্জন, প্রেম–ভাঙন—ঠিক যেন পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসের মতো এক বর্ণিল জীবন তাঁর। বিতর্কের মধ্যে পড়ে যেমন তিনি সমালোচিত হয়েছেন, তেমনি কাজের জন্য হয়েছেন প্রশংসিত। ‘কবে বিয়ে করছেন বা বিয়ে করবেন কি না’ প্রশ্নের মুখে পড়া তারকাদের তালিকায়ও তাঁর অবস্থান শীর্ষে। পৃথিবীর অগণিত মানুষের প্রিয় অভিনেতার স্থান হাসিল করে নেওয়া এই সুপারস্টার আর কেউ নন, ‘ভাইজান’খ্যাত সালমান খান।
১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে সালমান খানের জন্ম। সম্পূর্ণ নাম আবদুল রশিদ সেলিম সালমান খান। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ ছবি দিয়ে রুপালি পর্দায় তাঁর অভিষেক। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে কাজ করেছিলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা প্রথম চলচ্চিত্র ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’। ওই সময়ের ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় চলিচ্চত্রটি স্থান করে নেয়। পাশাপাশি অভিনয়ের জন্য ৩৫তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে পুরস্কারের জন্য সালমান মনোনীত হন।
সালমানের নামেই সিনেমা চলে, এমন কথাও চাউর আছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। বলিউডের ব্যবসাসফল থেকে জনপ্রিয় সিনেমার তালিকা, সর্বত্রই সালমানের দীপ্তিময় উপস্থিতি। তাঁর হাত ধরে অনেক তারকা থেকে নির্মাতা ও প্রযোজকেরা প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ১৭টি ব্যাক-টু-ব্যাক ১০০ কোটি ক্লাব পার হওয়া সিনেমা রয়েছে ‘সুলতানে’র নামের পাশে। তাঁর পদচারণে বলিউড ব্যবসায় ধন্য। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজকের তালিকায়ও নাম লিখিয়েছেন সালমান। সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কও ছুঁয়েছে তাঁকে। দৌড়াতে হয়েছে আদালত চত্বরে। দুর্ব্যবহারের জন্যও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
কিন্তু এসব সালমানের জনপ্রিয়তায় ভাটা ফেলেনি। ভক্তরা তাঁকে দূরে ঠেলে দেননি। দিনে দিনে তিনি আরও বেশি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছেছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। এই বিপুল জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কী? বিতর্ক, সমালোচনাকে পেছনে ফলে কীভাবে দর্শক–হৃদয় জিতলেন তিনি? অভিনেতার ৫৯তম জন্মদিনে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা যাক।
সালমান খান অভিনীত হিন্দি সিনেমার সংখ্যা এক শরও বেশি। অ্যাকশন মুভিতে সালমান যেমন প্রাণবন্ত, রোমান্টিক অভিনয়ে তাঁর গম্ভীরতাও তেমন আকর্ষণীয়। প্রতিটি চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণের পাশাপাশি শরীরী ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও অনবদ্য এই অভিনেতা। তাঁর বাচনভঙ্গি, কণ্ঠস্বর দর্শককে মুগ্ধ করে। সিনেমায় দেওয়া তাঁর অনেক সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
১৯৮৯ সালের সিনেমা ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’। এই সিনেমায় সালমানের ‘দোস্তি কা উশুল হ্যায় ম্যাডাম: নো সরি নো থ্যাংক ইউ’ সংলাপটি দর্শক পছন্দ করেছিল। ‘বাবুজি ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ সিনেমার এই সংলাপটিও জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘সাজন’ সিনেমার ‘আহাত সে কয়ি আয়ে তো লাগতা হ্যায় কি তুম হো, সায়া সা লেহরায়ে তো লাগতা হ্যায় কি তুম হো—সাজন’ সংলাপটি আজও বলেন অনেকে।
২০১৫ সালের সিনেমা ‘বজরঙ্গি ভাইজান’। দেশে ও বিদেশে সুপারহিট, ব্যবসাসফল এই সিনেমায় একজন আলাভোলা বজরঙ্গি–ভক্ত ভারতীয়র চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান খান। সীমান্ত পার হয়ে হারিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট মেয়েকে পাকিস্তানে তার মা–বাবার কাছে তিনি পৌঁছে দিতে চান। এই সিনেমায়ও তাঁর মুখে শোনা যায় চমৎকার সব সংলাপ।