দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৫:১৯

‘এহন একটাই চিন্তা, কেমনে ঘরডা তৈয়ার কইরাম, টেকা কই’

ঘরের চালা মাটির সঙ্গে লাগানো, উঠানে হাঁটুসমান পানি। সফিকুর রহমান তাঁর ভাঙা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বুধবার দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামে।

উঠানে হাঁটুসমান পানি। ঘরের চালা মাটির সঙ্গে লাগানো। আসবাবপত্র কিছু আছে, আর কিছু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। সত্তরোর্ধ্ব সফিকুর রহমান শূন্য ঘরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন। কিছুদিন আগেও সাজানো ছিল সংসারটা। এখন সেই সাজানো বাড়িঘর ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।

গত ২৩ আগস্ট রাতে গোমতী নদীর বুড়বুড়িয়াতে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। নদীভাঙনের ১৩ দিন পরও বেশ কিছু গ্রাম এখনো পানিবন্দী। পানিবন্দী গ্রামগুলোর মধ্যে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের শিকারপুর একটি। এই গ্রামের পূর্ব অংশের বাসিন্দা সফিকুর।

আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামে প্রবেশের মূল সড়কটি ভাঙা। খানাখন্দের কারণে সড়ক দিয়ে যান চলাচল কমে গেছে। বিভিন্ন বাড়িতে কাদাপানি। পুকুরগুলো পানিতে টইটুম্বুর। দেয়ালে পানির দাগ লেগে আছে। গ্রামের মূল সড়ক ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে সড়কের বাম পাশে সফিকুর রহমানের বাড়ি। তাঁর আগের বাড়িটিতে কেউ নেই। ওই বাড়িটির উঠানের হাঁটুসমান কাদা মাড়িয়ে যেতে হয় সফিকুরের বাড়ি। তাঁর উঠানে হাঁটুসমান পানি। তাঁর ভিটার পশ্চিম পাশে টিনের ঘরটি ভেঙে শুধু চালা মাটির সঙ্গে লেগে আছে। বেশির ভাগ আসবাবপত্র ভেসে গেছে নদীর পানির স্রোতে। পানির স্রোতে ভেসে গেছে রান্না ঘর ও শৌচাগার।

উঠানে দাঁড়িয়ে বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ দেখছেন আর আফসোস করছেন সফিকুর। জানান, তাঁর এক ছেলে ও চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেটা চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ২৩ আগস্ট রাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়, নদীর বাঁধ ভেঙেছে। সেই ঘোষণা শুনে স্ত্রী হালিমা বেগমকে নিয়ে কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে দৌড়ে গিয়ে হাজির হন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে রাতটা পার করেন। সকালে স্ত্রী হালিমাকে ছোট মেয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে যান সফিকুর। সেখানে গামছা পেতে শুয়ে-বসে সাতটা দিন পার করেন। পানি কমতে শুরু করলে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, তাঁর যে মূল ঘরটি পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। বেশির ভাগ আসবাব ভেসে গেছে। পাশের যে ঘরটিতে রান্নাসহ হাঁস-মুরগি পালন করতেন, সে ঘরটা কিছুটা ভালো রয়েছে। তবে ঘরে থাকা আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। রান্নাঘরের পাশে পানির স্রোতে বড় একটি গর্ত হয়েছে। সেই গর্তে এখনো বুকসমান পানি।

সফিকুর বলেন, ‘এত পানি আমি জীবনেও দেহি নাই। উঠানো আমার মাথার উপরে পানি ছিল। হোতের কারণে স্পিডবোট দিয়াও আইতাম পারছি না। আহারে পানি, আহারে হোত (স্রোত)। এহন একটাই চিন্তা, কেমনে ঘরডা তৈয়ার কইরাম, টেকা কই। আর কয়দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাইক্কাম। আমার আর কিচ্ছু ভাল্লাগদেছে না। আল্লায় কী পরীক্ষা নিতাছে?’

এদিকে শিকারপুরসহ আশপাশের এলাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি বহু পরিবার। মাইলের পর মাইলজুড়ে ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবককে দেখা যায়, খাতা–কলম নিয়ে ধ্বংস হওয়া বাড়িঘরের তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাঁরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এ কাজ করছেন বলে জানান।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের তালিকা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়ে শিগগিরই কী সিদ্ধান্ত হয়, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট