মাঙ্কিপক্স (এমপক্স) একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা প্রথমে বানরের দেহ থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল বলে একে এমপক্স বলা হয়। প্রথমে এই রোগটি আফ্রিকায় সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এখন এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এমপক্স শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যা আমাদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্স নিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা জারি করেছে এবং বাংলাদেশেও সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এমপক্স শনাক্ত হয়নি, তবে যেহেতু রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এতে করে একদিকে অহেতুক আতঙ্ক এড়ানো যাবে এবং অন্যদিকে রোগটি প্রতিহত করা সহজ হবে।
কীভাবে ছড়ায় এমপক্স:
এমপক্স মূলত শারীরিক সংস্পর্শ, চুম্বন, শারীরিক সম্পর্ক, আক্রান্তের ফুসকুড়ির রস, হাঁচি-কাশি, ব্যবহার্য সামগ্রী এবং নিশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়।
সাধারণ উপসর্গ:
এমপক্সের প্রধান উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠ ও মাংসপেশির ব্যথা, লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়ি।
উপসর্গ দেখা দিলে করণীয়:
এটি একটি সংক্রামক রোগ, তাই উপসর্গ দেখা দিলে সবার আগে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসক বা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাতে হবে। যতদিন পর্যন্ত সব ফুসকুড়ি শুকিয়ে না যায় এবং নতুন চামড়া না ওঠে, ততদিন পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ফুসকুড়িগুলো ঢেকে রাখতে এবং মাস্ক পরিধান করতে হবে।
চিকিৎসা:
এমপক্সের চিকিৎসা সাধারণত উপসর্গভিত্তিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য এবং প্রচুর তরল গ্রহণে রোগটি উপশম হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগ বা এইডস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
আমাদের উদ্দেশ্য হলো আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতনতা তৈরি করা। যদি এমপক্সের লক্ষণ দেখা দেয় বা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার পর ২১ দিনের মধ্যে জ্বর বা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তবে এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইনে (১০৬৫৫) যোগাযোগ করুন।
পরামর্শ দিয়েছেন:ডা. শাফেয়ী আলম, মেডিকেল অফিসার, কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গাজীপুর