ইসকনের (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) দাবি ও তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ঘাতক (শেখ হাসিনা) সরকারের পতনের পর থেকে এদের অস্বাভাবিক তৎপরতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ করে একটি সংগঠন, যাদের বৈধতা আছে কি না, এ সম্পর্কেও দেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা (চিন্ময় কৃষ্ণ দাস), যাঁর বিতর্কিত আচার-আচরণের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে অন্য দেশের বিবৃতির ঘটনা বিরল।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
রিজভী আরও বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস নামে এক ব্যক্তি, যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ সেই সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন, তাঁকে পূর্বেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গুম-খুনসহ ভয়ংকর অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে। আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্য দেশের বিবৃতির ঘটনা বিরল।
কী দাবি নিয়ে চিন্ময় মাঠে নেমেছেন, সে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘তাদের কী দাবি? দাবি সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি, সেটিও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে, দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে কী এমন ঘটনা ঘটেছে যে সাতটি বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দিয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে। তারা কী করতে চাচ্ছে। আবার পার্শ্ববর্তী দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁর গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’
চিন্ময়ের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের খুনিরা যখন বিশ্বজিৎ দাসকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নিপুণ রায়কে রাস্তায় ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিল, তখন তো পার্শ্ববর্তী দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। তারাও তো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল, হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করল, বাংলাদেশে ইসকন নামে ভুঁইফোড় সংগঠনটিকে কখনো দেখিনি একটি বিবৃতি দিতে। অথচ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সেই সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্য দেশ বিবৃতি দিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে?’
এর জন্য ভারতকে দায়ী করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয়, তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক, তা কখনোই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র চায়নি, চায়নি বলেই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাদের জন্য তারা বিলাপ করছে, আটক হলে আক্ষেপ করছে, প্রতিবাদ করছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের স্বার্থে কখনোই কাজ করেনি। বাংলাদেশ মরে যাক, ধ্বংস হোক—তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। এটি হচ্ছে দিল্লির ঘোষিত নীতি। শেখ হাসিনা থাকলে তাদের অনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে কোনো বিঘ্ন হতো না। শেখ হাসিনার পতনে এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ, জাতীয়তাবাদী শক্তি কিছুটা স্পেস পেয়েছে, বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে, গণতন্ত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে—এই জিনিসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ভালো লাগছে না।’