আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে শরীরের নড়াচড়া সহজভাবে করি। তবে কিছু মানুষের জন্য এই কাজগুলো হয়ে ওঠে এক বিপদসংকুল চ্যালেঞ্জ। মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার এমন একটি রোগ, যেখানে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। আজ, ২৯ নভেম্বর, সারা বিশ্বে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার দিবস পালিত হচ্ছে।
### ধরন ও উপসর্গ
মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে:
– **অ্যাটাক্সিয়া**: শরীরের ভারসাম্য ও সমন্বয়ের অভাব, যার ফলে হাঁটা বা দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
– **রাইটারস ক্র্যাম্প**: হাতের পেশিতে টান বা ব্যথা, বিশেষ করে লেখার সময়, যা পেশাগত জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করে।
– **ওরোম্যান্ডিবুলার ডিসটোনিয়া**: মুখ ও চোয়ালের অস্বাভাবিক সংকোচন, যা খাওয়াদাওয়া বা কথা বলায় সমস্যা তৈরি করে।
– **সাইকোজেনিক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার**: মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে শরীরের অস্বাভাবিক নড়াচড়া।
– **গেইট ডিজঅর্ডার**: হাঁটার ধরনে অস্বাভাবিকতা, যা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
– **ডিসকাইনেশিয়া**: অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া।
– **ওষুধজনিত মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার**: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরের নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা।
– **কোরিয়া ও মাইকোলোনাস**: শরীরের বিভিন্ন অংশে হঠাৎ, অস্বাভাবিক ও দ্রুতগতির নড়াচড়া।
### চিকিৎসা
মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা রোগের প্রকৃতি ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, পার্কিনসন্স ডিজিজ বা ডিসটোনিয়ার জন্য বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ফিজিক্যাল থেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন শরীরের পেশির শক্তি ও সমন্বয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। সাইকোজেনিক মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে মানসিক পরামর্শ ও থেরাপি অপরিহার্য।
### সতর্কতা
মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারের রোগীরা অনেক সময় কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন। প্রাথমিক অবস্থায় কম্পন বা অস্বাভাবিক নড়াচড়াকে অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা বয়সের প্রভাব বলে ভুলে যান। তবে ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
**ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী**,
অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ,
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা