দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০১:৩৮

ওহাইওর সিনসিনাটি শহরে একটি দিন

মাত্র চার বা পাঁচ দিন হাতে ছিল। এরপরই বাক্স-পেটরা গুছিয়ে দুই বছরের পরিচিত ঠিকানা ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা। শেষ মুহূর্তে এত কাজ থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের কিছু জায়গা, কিছু স্টেট দেখা হয়নি। তাই শেষমেশ ওহাইওর সিনসিনাটি শহরই ঠিক হলো।

 

কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে আমার শেষ শনিবারে হুট করে সিনসিনাটি সফরের সিদ্ধান্ত হয়। একটি আকস্মিক ভাবনা, কিছুটা অবসর আর রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর—এই তিনটি কারণে আমরা লেক্সিংটন থেকে সিনসিনাটি শহরে রওনা হলাম। ব্যস্ত রাস্তায় যানজট না থাকায় আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ওহাইওর এই প্রধান শহরে।

 

শহরের প্রশস্ত রাস্তায় পা রাখতেই প্রথমে চোখে পড়ল মানুষের ভিড়। বুঝতে পারলাম, শনিবার হওয়ায় সেদিন ছিল ‘গেম ডে’। রাস্তার চারপাশে লোকজনের কোলাহল, নানা রকম খাবারের ঘ্রাণ, আর শহরের টিমের জার্সি—সব মিলিয়ে এক ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়েছিল।

 

পুরোনো স্থাপত্য আর আধুনিকতার মিশেলে সিনসিনাটি যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। অভ্যাসবশত আমরা শহরের বিভিন্ন স্থানে খানিকটা হেঁটে বেড়ালাম। শহরে রঙিন ম্যুরাল, শহরতলিতে কফিশপ, শহর ঘুরে দেখার ট্রাম, আর ওহাইও নদীর পাশে হাঁটার জন্য ট্রেইল—এসব আমাদের নজর কেড়েছে। ট্রেইলটি স্য’ইয়ার পয়েন্ট পার্ক হিসেবে পরিচিত, যা বড় উৎসব, দৌড় প্রতিযোগিতা কিংবা কনসার্টের জন্য চমৎকার একটি স্থান।

 

আমরা যখন এখানে পৌঁছেছিলাম, তখন দুপুর ছিল। গ্রীষ্মের তাপ আমাদের পুড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে নদীর পাশে পরিবেশ ছিল একেবারে ভিন্ন। সন্ধ্যায় শহরের আলোগুলো জ্বলে উঠছিল, আকাশছোঁয়া ভবনগুলো আলোয় ভরে উঠছিল আর নদীর ওপর ক্রুজ ভেসে চলছিল। আমাদের হাতে সময় ছিল না, নয়তো মনোরম রোব্লিং সাসপেনশন ব্রিজের নিচে নৌকায় চড়ে নদীর আমেজ নিতে পারতাম। বড় বড় ভবন ঘিরে ছোট ছোট পার্কে বসে থাকা মানুষদের দেখে মনে হচ্ছিল, ছুটির দিনে সবাই কতটা নির্ভার!

 

স্য’ইয়ার পয়েন্ট পার্কের আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো ‘লেবিরেন্থ’ এবং ‘ইনক্লুসিভ প্লেগ্রাউন্ড’। লেবিরেন্থটি এমন এক শিথিল পথ যেখানে হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। প্লেগ্রাউন্ডটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে শিশুদের জন্য স্লাইড, দোলনা এবং নানা ধরনের খেলনা রয়েছে। সিনসিনাটি শহরের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন অনুভব করতে চাইলে স্য’ইয়ার পয়েন্ট পার্ক নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার স্থান।

 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে না হতেই আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। গাড়ির জানালা দিয়ে সন্ধ্যার আলো-ছায়ার খেলায় মুগ্ধ হয়ে শহরটাকে বিদায় জানালাম। এক কাপ কফি হাতে আর সঙ্গের ব্যাগে কিছু ফল নিয়ে লেক্সিংটনের দিকে ফিরে আসার পথে মনে হচ্ছিল, হয়তো আবার এই শহরে আসলেও এমনভাবে আসা নাও হতে পারে। এই ছোট্ট ভ্রমণটি আমাদের জীবনের একটি সুন্দর অধ্যায় হয়ে থাকবে।

 

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট