নাকের অ্যালার্জি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা। এটি একটি জটিল রোগ, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে কষ্টকর করে তোলে। যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যালার্জির ফলে হাঁচির উপদ্রব দেখা দেয়, যা পরে শ্বাসকষ্টের কারণও হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে নাকের অ্যালার্জিকে “অ্যালার্জিক রাইনাইটিস” বলা হয়, যার মানে হল অ্যালার্জির কারণে নাকে প্রদাহ।
অ্যালার্জির মূল কারণ হল এমন কিছু উপাদান, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘরের পুরোনো ধুলাবালি, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর পশম, বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণে বা পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এই রোগ হতে পারে। যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত থাকে, তবে অন্যদেরও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন বা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়লে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
নানা ধরনের অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবার, যেমন চিংড়ি, ইলিশ, ডিম, গরুর মাংস, বেগুন, দুধ, তামাক ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিকর অ্যালার্জেন হচ্ছে মাইট, যা অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং ঘরের ধুলাবালি, বিছানা বা বালিশে থাকে। এটি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি অনেক গম্ভীর আকার নিতে পারে।
নাকের অ্যালার্জির প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, অতিরিক্ত হাঁচি হওয়া, নাকে চুলকানি বা কোনো কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, শ্বাসকষ্ট, নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া, মাথাব্যথা, গা ঘোরা এবং কাশির উপসর্গ।
চিকিৎসা হিসেবে, অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পেতে প্রথমে এ ধরনের উপাদানগুলো থেকে দূরে থাকতে হয়। চিকিৎসকরা এ ধরনের রোগীদের জন্য এন্টিহিস্টামিন, সোডিয়াম ক্রোমোগ্লাইকেট, এবং স্টেরয়েড ন্যাজাল স্প্রে প্রদান করেন। নাকের বন্ধভাব সাময়িকভাবে নিরাময় করতে নাকের ড্রপ ব্যবহার করা হয়, তবে হার্টের রোগীদের জন্য কিছু নাকের ড্রপ বিপজ্জনক হতে পারে। এন্টিহিস্টামিন শিশুরা বা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযোগী নয়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।